১৯ জুলাই (শনিবার) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য চলাকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান। মুহূর্তেই সাড়া পড়ে যায় উপস্থিত হাজারো মানুষের মাঝে। তবে চমৎকার দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন উপস্থিত মেডিক্যাল টিম। শুরু হয় মাঠেই প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম।
ঘটনার শুরুতে দ্রুত এগিয়ে আসেন এফসিপিএস ও এমআরসিএস, সার্জারি বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসানুল বান্না। তাঁর সাথে যোগ দেন পিজির সহকারী অধ্যাপক ডা. আতিয়ার, নিউরোসায়েন্স বিশেষজ্ঞ ডা. মুনাদি ইসলাম, ইএনটি চিকিৎসক ডা. আলি আফতাব এবং কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুজাক্কিরসহ একাধিক অভিজ্ঞ চিকিৎসক।
এ সময় দলের সেক্রেটারি জেনারেল উপস্থিত সবার উদ্দেশে আহ্বান জানান, "শান্ত থাকুন, যার যার জায়গায় থাকুন।" ফলে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় থাকে, তবে উপস্থিত জনতার মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়।
দ্বিতীয়বার পড়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁর বক্তব্য বন্ধ করতে অনুরোধ করলেও, তিনি বসা অবস্থায়ই বক্তব্য চালিয়ে যান। দৃশ্যটি উপস্থিত সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায় — এক ঈমানদার নেতা তাঁর দায়িত্ব থেকে পিছপা হননি।
এদিকে চিকিৎসা চলতে থাকে মঞ্চেই। ব্লাড প্রেসার, পালস, চেস্ট অ্যাসকালটেশন, আরবিএস সহ প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট শুরু হয়। ফ্লুইড রিসাসিটেশন ও ইনফিউশন সেটও প্রস্তুত করা হয়। বক্তব্য চলাকালেই আঙুল থেকে রক্ত সংগ্রহের মাধ্যমে আরবিএস পরীক্ষা করা হয়।
ঘটনাটির আরেক মানবিক দিক ছিল এনসিপি নেতা সার্জিস আলমের ভূমিকা। তিনি ভিড় না বাড়িয়ে দূরে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং হাত তুলে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন — এ ছিল এক অবিশ্বাস্য, আবেগঘন ও স্মরণীয় মুহূর্ত।
পরবর্তীতে সমাবেশ শেষে জামায়াতের আমীর কে হাসপাতালে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ, খেলাফত মজলিসের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতারা সহ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, ধর্ম উপদেষ্টা সহ অনেকে।
প্রধান উপদেষ্টা, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ দূর থেকে সার্বিক খোঁজখবর নেন।
এছাড়া চরমোনাই মাহফিলে হাজারো মুসল্লিকে সঙ্গে নিয়ে শায়খে চরমোনাই হাফিজাহুল্লাহ জামায়াতের আমীরের সুস্থতার জন্য দোয়া করেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে এই ঘটনা শুধু একটি স্মরণীয় মুহূর্ত নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি আদর্শ। দলমতের উর্ধ্বে উঠে, জাতি হিসেবে মানবতার পক্ষে অবস্থান নেয়ার এক অনুপম দৃষ্টান্ত।
মন্তব্য করুন