মোঃ শরিফুল ইসলাম
প্রকাশঃ 21-মে-2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে নাকি জাতীয় সরকার নির্বাচন আগে

জাতীয় সরকার নির্বাচন আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে এটাই  বর্তমানে রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে  উঠেছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার চাচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করতে আর বিভিন্ন রাজনৈনিত দল ও  জোটগুলো চাচ্ছে  জাতীয় সরকার নির্বাচন আগে করতে। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবে এটাই গনতান্ত্রিক দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার। সুতরাং সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহনযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। তারা তাদের সেই ইস্যুতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তবে দেশের অধিকাংশই রাজনৈতিক দলই এর বিরোধিতা করেছে এবং সরকার জাতীয় সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য জোরালো ভাবে আহবান করছে।
আসুন দেখি স্হানীয় নির্বাচন আগে করা কেন যাবে না?? 
 আসলেই গনতান্ত্রিক দেশের সংবিধানের অনুসারে দেশ পরিচালনা করবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা, এর বাহিরে শুধু নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনকে সুষ্ঠু  সুন্দর, নিরপেক্ষ গ্রহনযোগ্য অংশগ্রহণ মূলক এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে দল নিরপেক্ষ কয়েকজন ব্যাক্তিদের দ্বারা একটি  উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হবে তাদের অন্তবর্তীকালীন সরকার তথ্য তত্বাবধায়ক সরকার অথবা নির্বাচনকালীন সরকার বলা হবে। সুতরাং সেই আলোকে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার যদিও জনগণের প্রয়োজনেই গঠিত হয়েছে তারপরেও নির্বাচিত সরকার নয় কিন্তু!!  সুতরাং স্থানীয় সরকার নির্বাচন যদি এই সরকারের অধীনে হয় তাহলে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়!! তাছাড়া স্হানীয় সরকার নির্বাচনে কমবেশি সংঘাত সহিংসতা তৈরি হয় আর এই মূহুর্তে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে সেই সংঘাত সহিংসতা আরো বেশি হবে এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হবে!! আর পতিত আওয়ামী সরকারের দোসরাও এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠবে তারা নির্বাচন বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে আর তাদের সঙ্গ দেবে প্রশাসনের ভেতর লুকিয়ে থাকা স্বৈরাচারীর দোসররা!  সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নির্বাচনের  অংশ গ্রহণ নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করবে!! বিগত দিনের মত সংখ্যালঘুদের লেলিয়ে দিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তারা সবোর্চ্চ চেষ্টা করবে!! সারা বিশ্বকে দেখাবে অন্তবর্তীকালীন সরকার কতটা দুর্বল তাদের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারবে না এবং সারা বিশ্ব থেকে তখন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি যেন চাপ সৃষ্টি করে  এবং প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে!! কারণ জাতীয় সরকার  নির্বাচন যেহেতু হয়নি সেহেতু তাদের ফিরে আসার সম্ভবনা রয়েছে বলে তারা মনে করবে!!তাছাড়া স্হানীয় সরকার নির্বাচনে যেহেতু দলীয় প্রতিক ছাড়া হবে সেহেতু প্রার্থীর সংখ্যা প্রচুর হবে। আধিপত্য বিস্তার ক্ষমতার প্রভাব   দেখাতে গিয়ে সাংঘর্ষিক ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং পরাজিত প্রার্থীরা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে!!  আর যদি কোন দলের প্রার্থীরা বেশি  নির্বাচিত হয় তাহলে অন্যান্য দলগুলো অন্তবর্তীকালীন সরকার একটি নিদিষ্ট গোষ্ঠীকে সমর্থন বা সুবিধা দিয়েছে বলে প্রোপাগান্ডা  প্রচার করবে   সুতরাং জনগণের মধ্যে আবারও সরকারি প্রতি বিরূপ  প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থিত প্রার্থীরা যখন পরাজিত হবে তখন তারা এ সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং আগামীতে জাতীয় সরকার  নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে!! তাছাড়া অন্তবর্তী কালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল সেই  কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব  হয়নি বলে জনগণ মধ্যে প্রচার করতে থাকবে এবং জনগণ নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে!! অন্তবর্তী কালীন সরকারের প্রতি জনগনের যে বিশ্বাস, আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা, ভরসা ছিল তা উঠে যাবে!!
 সুতরাং জাতীয় সরকার  নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে সকলের অংশগ্রহণ অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে এবং  প্রশ্নবিদ্ধ হবে!! 
সুতরাং আমরা যেহেতু দেশ নতুনভাবে তৈরি করতে এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে তাদের প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং জাতীয় ঐক্যবদ্ধতা সৃষ্টির লক্ষ্য দেশ সংস্কার করতে যাচ্ছি তাহলে কেন আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হতে যাব???
আমরা নির্বাচিত সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহনযোগ্য অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন যে হয় সেটা দেখার জন্য প্রহর গুনছি আর যত সংস্কার তো সেটার জন্যই হচ্ছে  সুতরাং আমরা সেই  পরিবেশটাকেই প্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করি।
বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি জনগণের একটা বিশাল সমর্থন রয়েছে সুতরাং তাদের উচিত হবে তারা স্হানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে না গিয়ে জাতীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাওয়া। 
 এদেশে একটা জাতীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে  সুষ্ঠুভাবে সকলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিজেদের সেই গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখা। নির্বাচিত সরকারের কাছে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করা।
 এরপর দেখার বিষয় হবে নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্হানীয় নির্বাচন গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয় নাকি সুষ্ঠু সুন্দর গ্রহনযোগ্য হয় !! 
যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে তো নির্বাচন সংস্কার সফল হয়েছে আর যদি হয় প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে সংস্কার সফল হয়নি বোঝা যাবে।
 তখন নিজেদের গ্রহনযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে জনগনকে সাথে নিয়ে দূর্বার আন্দোলন করে তুলতে পারবে এবং দেশের মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে দীর্ঘমেয়াদি দায়িত্ব নিতে পারবে। আর জনগণ অবশ্যই তাদের পাশে থাকবে।সুতরাং বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকারের সফলতা কি প্রমাণ করার জন্যই স্থানীয় সরকারের পরিবর্তে জাতীয় সরকার নির্বাচন আগে করা উচিত বলে মনে করি।
সংস্কার বা পরিবর্তন  তখনই কার্যকর যখন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহনযোগ্য অংশগ্রহণ মূলক  নির্বাচন আয়োজন করা হবে এবং জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। সংস্কারের প্রথম ধাপ জাতীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করা এবং জনগণের মত প্রকাশ করার অধিকার  প্রতিষ্ঠা করা এবং দ্বিতীয় ধাপ হবে নির্বাচিত ব্যক্তিরা সংস্কার মত কাজ করে কিনা সেটা দেখা সুতরাং নির্বাচন ও সংস্কার  দুইটাকে অবশ্যই একই পাল্লায় রাখতে হবে। সংস্কার আর নির্বাচনকে মুখোমুখি করা যাবে না!!
নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই সংস্কার বাস্তবায়নে রুপ নেবে।
তাছাড়া বর্তমানে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যে বৈরিতা ও যুদ্ধমূখি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং  বৈশ্বিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে দেশের  ভুরাজনীতি ও সার্বভৌমত্বের কথা বিশ্লেষণ করে একটি নির্বাচিত সরকার অত্যান্ত জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে।
সুতরাং দীর্ঘমেয়াদি স্হানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে না এগিয়ে জাতীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচিত সরকার সাথে সকলেই মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণ, সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে।
তাহলেই জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা প্রকৃত অর্থে বাস্তবে পরিণত হবে।


মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রেলপথ ব্লকেড কর্মসূচি শিথিল, ১১টায় বৈঠক, তারপর নতুন সিদ্ধান্

1

নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার টালবাহানা করছে: রুহুল কবির র

2

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলা, নিহত ২০ জনের বেশ

3

চ্যাটজিপিটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় কোন দেশে?

4

অচেনা লুকে ‘হৃদায়ম’ নায়িকা

5

ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব, দেরি হলে সংকট বাড়বে

6

সাতক্ষীরার বাজারে উঠেছে দেশীয় প্রজাতির আম

7

টঙ্গীতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

8

রাজধানির সাভারে যুবদলের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

9

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অভিভাবকহীন প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়ে

10

খুরুশকুলে মৎস্য ঘেরে যুবক খুন

11

এপ্রিল আসলেই আতংকিত হয়ে পড়েন উপকূলবাসী: অরক্ষিত বেড়িবাঁধ

12

কারিগরি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত থেকে সরে এল

13

‘ডিসেম্বরই শেষ সময়’, শনিবার যুগপৎ সঙ্গীদের সঙ্গে বসছে বিএনপি

14

ভারতে মুসলিম নিধনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একের পর এক আইন বাস

15

নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলায় সাংবাদিক মিলন ও হাবিব আহত,হামল

16

জব্বারের বলীখেলার ১১৬তম আসর ২৫ এপ্রিল

17

৫ মিনিট চার্জে ৩ ঘণ্টা কথা বলা যায় এই স্মার্টফোনে

18

গ্যাস সংযোগ পাবেন শিল্পমালিকরা

19

ঢাকায় আজও বজ্রবৃষ্টির আভাস

20