রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ গরু জবাই ও মাংস রান্নার সময় সংক্রমিত হয়ে তাঁরা মারা যান বলে স্থানীয় পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গত আগস্টের মাঝামাঝি পীরগাছা সদরের মাইটাল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক (৫০) অসুস্থ গরু জবাইয়ের পর মাংস কাটতে গিয়ে হাতে সামান্য কেটে যান। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর হাতে ঘা ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাঁকে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মরহুমের স্ত্রী ফেন্সি বেগম জানান, “আগস্টের মাঝামাঝি পাশের বাড়ির একটি অসুস্থ গরু জবাই করা হলে আমার স্বামী মাংস কাটতে সাহায্য করেন। এ সময় তাঁর একটি আঙুল সামান্য কেটে যায়। কয়েক দিনের মধ্যেই ঘা হাতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, পশু থেকে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করেছে। সেখানেই তিনি মারা যান।”
একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে পারুল ইউনিয়নের আনন্দী ধনিরাম গ্রামের গৃহিণী কমলা বেগম (৪৫) মারা যান ৬ সেপ্টেম্বর। তাঁর স্বামী জয়নাল আবেদিন বলেন, “আমার ভাগিনার দুইটা গরু অসুস্থ হলে জবাই করা হয়। স্ত্রী সেই মাংস রান্না করার দুই দিন পর হাতে ঘা ওঠে। পরে দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।”
পরিবার জানায়, কমলা বেগমের ছেলে দুলাল মিয়াসহ পরিবারের আরও তিনজন সদস্য এখনো অসুস্থ এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, একের পর এক এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনায় পীরগাছা ও আশপাশের এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁরা দ্রুত ভেটেরিনারি বিভাগ ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে সচেতনতা ও চিকিৎসা কার্যক্রম জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য দেয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অ্যানথ্রাক্স একটি সংক্রামক রোগ যা সাধারণত অসুস্থ পশুর সংস্পর্শ থেকে ছড়িয়ে পড়ে। তাই অসুস্থ বা মৃত পশুর মাংস কাটাকাটি ও রান্নার সময় সতর্ক থাকা এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।