পটুয়াখালী জেলায় বেআইনিভাবে পরিচালিত চক্রবদ্ধ সুদ ব্যবসার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে প্রশাসন। জেলার অসহায় ও আর্থিকভাবে অক্ষম মানুষদের বিপদের সুযোগ নিয়ে যে চড়া সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে এবং পরে ব্ল্যাংক চেকে অতিরিক্ত অর্থ লিখে তাদের নিঃস্ব করে ফেলা হচ্ছে— এমন অভিযোগে প্রশাসন সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে।
সোমবার (১২ মে) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন।
সভায় পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান টোটন জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে একটি চক্র ব্ল্যাংক চেক আদায় করে চড়া সুদে টাকা দিয়ে মানুষের দুর্দশাকে পুঁজি করে ফায়দা নিচ্ছে। সুদগ্রহীতারা সময়মতো টাকা ফেরত দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে অতিরিক্ত অঙ্কে মামলা দিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
এ প্রেক্ষিতে সভায় উপস্থিত সকল সদস্য একমত হন যে, এ ধরনের অবৈধ ও অনৈতিক কার্যক্রম রোধে প্রশাসনিক ও সামাজিক উভয় দিক থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
জেলা প্রশাসক সভায় উপস্থিত সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সুদকারবারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, তিনি সমাজে এদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানান।
ধর্মীয় দিক থেকেও জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক জেলার সকল মসজিদের ইমাম ও খতিবদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন খুতবা ও ধর্মীয় আলোচনায় সুদের ভয়াবহতা ও ইসলামে এর কঠোর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা হয়।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ, সেনাবাহিনীর পটুয়াখালী ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রেজওয়ান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারেক হাওলাদার, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম আরিফসহ বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা।
প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ব্যাপকভাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা এ উদ্যোগকে সময়োপযোগী ও মানবিক সিদ্ধান্ত হিসেবে স্বাগত জানান।
মন্তব্য করুন