মোঃ শফিকুল ইসলাম শফিক।।
সুনামগঞ্জ জেলা মিঠাপানির মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত থাকলেও, তারি অংশ বিশেষ ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার টাংঙ্গুয়ার হাওরের অংশ সহ ১০৮ টি ছোট বড় হাওর ও বিল এবং কালাপানি, কংশনদ,কাওনাই নদী, সোমেশ্বরীনদী,সুনই নদী,বৈলাইনদী সহ আরো ছোট বড় ৫ টি নদী এই দুইটি উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে।
এখান থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার মৎস্য আহরণ হত,কিন্তু দুঃখের সঙ্গে এলাকাবাসী জানায়,ইজারাদাররা ফাল্গুন চৈত্র মাসে অবৈধভাবে খাল বিল শেলুমেশিন দিয়ে শুকিয়ে এবং মশারী জাল,চায়নাজাল,কারেন্টজাল ও চায়না বাইড় দ্বারা হাওর এবং নদীর গুলির মাছের বংশ ধ্বংস করে। অন্যদিকে প্রভাবশালী মহল ১ সনের জন্য খাস কালেকশনের নামে বন্দোবস্ত নিয়ে সম্পূর্ণ রুপে বিল বাদল শুকিয়ে মাছ ধরে ফেলে। এতে করে এ অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।
জৈষ্ঠ্য ও আষাঢ় মাসে হাওরে নদীতে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা ছাড়ে।কিন্তু বর্তমানে হাওর ও নদীগুলোতে মাছের প্রজনন খুব সামান্য পরিমাণে হয়েছে বলে মৎস্য জীবীরা জানিয়েছে। কিন্তু অসাধু মৎস্য শিকারীরা এরি মধ্যে মশারীজাল,খনাজাল,চায়নিজ জাল দিয়ে দল বেধে ১৫/২০ জন মিলে ৫০০-১০০০ হাত লম্বা জাল দিয়ে হাওরের ইজারাদারদেরকে টাকা দিয়ে দেশীয় মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে।
বর্তমানে দেশীয় মাছ - ঘোলষা,পাবদা,হিলুন, বাচা, মিনিমাছ,লাটি,কই, শিং, মাগুর, শোল,গজার,পুডা, রিডা,নানিদ,বাগাইড়,লাছ,বোয়াল,ঘাগট,কালিয়া, মাসুল,বাইম,কারগো স্থানীয় বাজার গুলুতে দেখাই যায়না।দেশীয় মাছের মধ্যে টেংরা, পুঁটি,মলা,ঢেলা,তারাবাইম,চিকরাবাইমা, ঘনিয়া মাছের পোনা, কালিয়া মাছের পোনা সচারাচর বাজারে দেখতে পাওয়া যায়, যাহা জনসাধারণের কিনে খাওয়া সাধ্যের বাইরে। পাইকারগণ এই সমস্ত মাছ চরা দামে কিনে ঢাকা সহ বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরে পাঠিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করে।
অন্যদিকে ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার ধর্মপাশা সদর বাজার, মধ্যনগর উপজেলা সদর বাজার, বাদশাগজ্ঞ বাজার, গাছতলা বাজার, জয়শ্রী বাজার, রাজাপুর বাজার, শানবাড়ী বাজার, গোলুকপুর বাজার, বংশিকুন্ডা বাজার, মহেশখলা বাজার সমূহ ঘুরে দেখা যায়, চাষ করা মাছের পশরা সাজিয়ে বসে আছে মাছ বিক্রেতারা- মাছ গুলির মধ্যে রয়েছে, পাংগাশ,তেলাপিয়া, সিলভার, কালিয়া, রুই,মিকরা,কারগো মাছের পোনা, শিং, কই চাষের মাছ বাজার ভরপুর।
এই সকল মাছ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং অখাদ্য কুখাদ্য খাইয়ে লালন পালন করা হয় বিধায় উল্লেখিত মাছ সমূহে দুর্গন্ধ করে এবং অনেক রোগের জন্ম দেয় তবু জনসাধারণ বাধ্য হয়ে এই সকল মাছ কিনে খাচ্ছে।
বর্ষা শুরু হওয়ার পর ২৭ জুন শুক্রবার বাইনছাপড়া বিলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন, মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল রায় ও অভিযানে অংশ গ্রহন করেন ধর্মপাশা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান ও মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুনিবুর রহমান সহ মধ্যনগর থানার পুলিশের সদস্য গণ।অবৈধ মশারী জাল, কারেন্ট জাল ও খনাজাল দিয়ে মাছ ধরার অপরাধে ৫ জনকে দুটি মামলায় ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং আনুমানিক ৪ লক্ষ টাকার অবৈধ ৩ টি কারেন্ট জাল ও ৫ হাজার ফুট লম্বা খনাজাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
উক্ত অভিযানের পর থেকে আজ পর্যন্ত ধর্মপাশা মধ্যনগর উপজেলায় অবৈধ জাল দ্বারা মৎস্য শিকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। ধর্মপাশা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ধর্মপাশা উপজেলায় ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার না করার জন্য মাইকিং করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং অবৈধ মৎস্য শিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন হাওর এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, শত শত অবৈধ জাল দিয়ে মৎস্য শিকারীরা মাছ ও মাছের পোনা শিকার করে চলেছে।
ভুক্তভোগী মহল দাবী জানিয়েছে, অবৈধ মৎস্য শিকারী ও দুনীতি বাজ ইজারাদারদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উধ্বর্তন কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ একান্ত ভাবে কাম্য।
মন্তব্য করুন