বাঁশখালী তথা চট্টগ্রামে উপকূলবাসীর জন্য বছরের এপ্রিল একটি দুঃসহ স্মৃতি জাগানিয়া মাস। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ম্যারি এ্যান এর থাবায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূল। ২৫০কিমি/ঘণ্টা বেগে আঘাত করে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ৬মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত করে এবং এর ফলে প্রায় ১,৩৮,০০০ মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়। বাঁশখালীতেই নিহত হয় ৩৫০০০ হাজার মানুষ। গৃহহীন হয় লক্ষাধিক মানুষ। উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী একটি টেকসই বেড়িবাঁধ আজও পেল যদিও ২৯৩ কোটি টাকার বাজেট ফেলেও স্থানীয় অভিযোগ সব নয়ছয় হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি, যার প্রমান বিভিন্ন অংশে ধ্বস ও ভাঙ্গন।
সরেজমিনে দেখা যায় বাঁশখালী উপজেলায় ৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। নির্মাণের এক বছরের মাথায় বেড়িবাঁধের কমপক্ষে ২০ টি স্থান্ব ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে স্থানীয় উপকূলবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বর্ষায় যদি সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হয়, তাহলে পুরো এলাকাটি প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যথাযথ তদারকি না করার কারণে দুই বছরেই বেড়িবাঁধের এই অবস্থা। বিগত দুই বছরে বাঁশখালীতে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি কিন্তু কোন জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই সিসি ব্লকও ভেঙে গেছে। উপকূলবাসীরা দাবি এই বর্ষায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরের পানিতে প্লাবিত হবে উপকূল।
নির্মিত স্থায়ী বেড়িবাঁধের বেশ কিছু অংশ জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই ভেঙে গেছে। সরেজমিনে দেখা খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদম রসুল এলাকায় বেড়িবাঁধ সাগরবক্ষের মিলে গেছে একই ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া অংশে প্রতিদিনই বেড়িবাঁধ ধ্বসে ভেঙ্গে সাগরে গড়িয়ে পড়ছে প্রতিদিন। একই চিত্র দেখা যায় খানখানাবাদ, পুকুরিয়া, সাধনপুরসহ আরো কয়েকটি গ্রামে। এসব এলাকায় সিসি ব্লক নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আট থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাস হলেই প্লাবিত হবে সমগ্র ইউনিয়ন, পানিবন্ধি হবে লক্ষাধিক মানুষ, জানমালের ক্ষতি তো আছেই। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই এই ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা (আরিফুল করিম ছদ্মনাম) জানান, ইউনিয়ন পরিষদের বিগত দুই চেয়ারম্যান এই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পণ্য সামগ্রী সরবরাহ করেন। সেই সাবেক এমপির পার্সেন্টেজ, সব মিলিয়ে বাজেটের পঞ্চাশ শতাংশও খরচ করা হয়নি বলে বেড়িবাঁধ এর এই অবস্থা। সেই সাথে গতবারের বিতর্কিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাসান ব্রাদার্স ও নাকি কাজ পেয়েছে। আবাও লুটপাটের আশংকা করছি। কাজটি সেনাবাহিনী কিংবা নৌবাহিনীর অধীনে হলে অন্তত লুটপাট হওয়ার আশংকা থাকত না।
পাউবো সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হলেও প্রকল্পের ব্যয় এবং সময়সীমা বারবার বাড়ানো হয়। বাঁশখালী উপকূলের জন্য ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির সময়সীমা ২০২১ সালে শেষ হলেও এখনো বাঁধের বেশ কিছু অংশে উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী উপ প্রকৌশলী তানজির সাইফ বলেন,'ইতমধ্যে মোট পাঁচ প্যাকেজে পাঁচটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিধিমোতাবেক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। বাঁশখালীর অভ্যন্তরীণ সড়ক চলাচলাচলের অনুপযোগী বিদায় সাগর পথে মালামাল আনা হবে তার জন্য জেটি নির্মাণ করতে হবে। বেড়িবাঁধ এর বেহালদশার কথা বলা হলে তিনি বলেন কিছু হবেনা। গত বছর কিছু হয়েছিল? এর মধ্যে আমাদের কাজ শুরু হবে।