এইচ আর সজিব
হেমন্ত প্রায় শেষের দিকে। এইতো ইতিমধ্যে সুবহে সাদিকের পর কোঁয়াশা ছড়িয়ে দিয়ে শীত তার আগমনের কথা জানান দিচ্ছে। আমাদের দেশের ওয়াজ মাহফিল গুলো হল শীতকালের একটি উন্নতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে ওয়াজ মাহফিল গুলোর উৎফুল্লতা এখন আর আগের মতো নেই; কেমন জানি সব সাদামাটা হয়ে যাচ্ছে। আগে সারা বছরে হাতে গোনা কয়েকটি মাহফিল হতো। আর শীত আসলেই ওই মাহফিল গুলোর জন্য দিন গুণতাম, মনের মাঝে বিভিন্ন পরিকল্পনা বুনতাম। আর বর্তমানে এইখানে ওইখানে বেহিসেব মাহফিল হয় ঠিকই, কিন্তু আগের উৎফুল্লতা গুলো যেন হারিয়ে গেছে। আগে একেকটা মাহফিল নিয়ে কত রকম আয়োজন চলত- বন্ধু বান্ধবের সাথে বিভিন্ন রকম প্ল্যান, বিকেলে সবার আগে মাহফিলে চলে যাওয়া, ভালো পোষাক পরিধান করা, আরো কত্তো কী! আর বাড়ির আশেপাশে মাহফিল হলে তো কোন কথাই নেই; এই উদ্যোগে বাড়িতে ভালো খাবার-দাবারের আয়োজন, দূর দূরান্ত হতে মেহমানদের আগমন, আরো কত কিছুই না হতো! বাড়ি থেকে বেশি দূরে মাহফিল হলে আব্বা-আম্মা বন্ধু বান্ধবের সাথে যেতে দিত না। আব্বা-ই নিয়ে যেত। বিকেল হলেই আব্বার জন্য অপেক্ষা করতাম কখন নিয়ে যাবে। আব্বা সারাদিন যেখানেই থাকত মাগরিবের সময় বাড়িতে চলে আসত আর মাহফিলে নিয়ে যেত। মধ্যরাত পর্যন্ত ওয়াজ শুনতাম। আর বাড়ি ফেরার সময় সবার জন্য ডালের বড়া, জিলাপি, খিলি পান আরো কতো কিছুই না নিয়ে আসতো আব্বা। এই বিষয় গুলো উপভোগ করতাম খুব।আগে একটা মাহফিল হলে আশেপাশের দশ গ্রাম থেকে মানুষ ছুটে আসত; সবাই আগে থেকেই নিজেদের যাবতীয় সকল কাজ আর ব্যস্ততা গুছিয়ে রাখতো। কিন্তু এখন আর এইসব চোখে পড়ে না।
বর্তমানে আগের তুলনায় অনেক বেশি মাহফিল হয়, লাখ লাখ টাকা খরচ হয়, কিন্তু আগের মতো শ্রোতা আর হয় না। এখনকার মাহফিল গুলোতে গেলে কষ্ট লাগে খুব। কতো লাখ লাখ টাকার আয়োজন, অথচ শ্রোতা নেই; মাঠ ফাঁকা।
ওয়াজ মাহফিল আমাদের দেশের ঐতিহ্য; আমাদের সংস্কৃতি। কেমন জানি আমরা আমাদের এই সংস্কৃতিকে হারাতে বসেছি; অবহেলায় ভাসিয়ে দিচ্ছি।
আমাদের উচিত এই মাহফিল গুলোকে পুনর্জীবিত করা। গ্রাম বাংলার এই সোনালী ঐতিহ্যকে ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব; আমাদের কর্তব্য।