টাঙ্গাইলের সন্তোষে সবুজ প্রকৃতির কোলে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) যেন বৃষ্টির দিনে এক ভিন্ন রূপে ধরা দেয়। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ সময় ক্যাম্পাসের প্রকৃতি হয়ে ওঠে আরও মোহনীয় ও আবেগঘন। গাঢ় মেঘে ঢাকা আকাশ, টুপটাপ বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে গোটা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে এক অনন্য স্নিগ্ধতা।
বৃষ্টির প্রথম ছোঁয়াতেই ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণ যেন পেয়ে যায় নতুন প্রাণ। হতাশা চত্বর, হাতির কবর, হল চত্বর, প্রত্যয় '৭১, বিজয় অঙ্গন, কৃষ্ণচূড়া লেন কিংবা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের চারপাশ—সবখানেই প্রকৃতির এক অপূর্ব সাজ। বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া গাছের পাতা, লাল ইটের ভেজা ভবন আর পানিতে ঝলমল করে ওঠা রাস্তা যেন হয়ে ওঠে এক জীবন্ত চিত্রকর্ম। শিক্ষার্থীরা বলেন, এই সময়ে ক্যাম্পাসে হাঁটলে মনে হয়, যেন প্রকৃতি নিজ হাতে রঙ-তুলিতে আঁকছে ভালোবাসার গল্প।
বৃষ্টি এলেও ক্লাস থেমে থাকে না। শিক্ষার্থীরা কেউ ছাতা মাথায়, কেউ বা ইচ্ছাকৃতভাবে ভিজেই পৌঁছে যান ক্লাসে। এই সময়ে বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে ওঠে এক অনুভবের উৎস। কেউ একা হাঁটেন, কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগ করে নেন ছাতার নিচের ছোট্ট জায়গা। কারও মনে ভেসে ওঠে স্মৃতির সুর, কেউ আবার লিখে ফেলেন কবিতার নতুন পঙ্ক্তি। এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে তরুণ মনের এক নিবিড় সংলাপ।
রানীপুকুর ঘাটলার কোণে বসে থাকা শিক্ষার্থী হোক বা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা কেউ—প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর চোখেমুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তির ছায়া। কেউ আবার ছুটে যান খেলার মাঠে, ভেজা মাঠে ফুটবল খেলায় মেতে ওঠেন প্রাণভরে। এ সময় মধুখালার টং-এর চায়ের আড্ডাও জমে ওঠে বেশ। এক কাপ চায়ের পাশে বসে ভাগ হয় শত গল্প—ভালোবাসা, স্বপ্ন কিংবা অভিমান। বৃষ্টির ছন্দে ছন্দে বাজে হাসির শব্দ, তৈরি হয় অমূল্য স্মৃতির ভাণ্ডার।
বৃষ্টির দিনে মাভাবিপ্রবির আরেক অনন্য রূপ ধরা দেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দলবেঁধে ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। কেউ প্রকৃতির রূপ ধরে রাখেন ফ্রেমে, কেউ আবার বন্ধুত্ব কিংবা একাকিত্বের মুহূর্ত শেয়ার করেন। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে টুপটাপ অনুভূতির গল্প, যা দেখে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মনেও জেগে ওঠে স্মৃতির ঢেউ।
মাভাবিপ্রবির বৃষ্টির দিন এক রঙিন আবেশ—যেখানে রোমান্স, বন্ধুত্ব, আত্মবিশ্লেষণ আর নিখাদ প্রকৃতিপ্রেম একত্রে মিশে যায়। এই দিনে ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে এক জীবন্ত অনুভবের স্থান—যেখানে তরুণ মনের আবেগ মিশে যায় প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্যে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বলেছিলেন,
“আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে...”
তেমনি বৃষ্টির দিনে মাভাবিপ্রবি হয়ে ওঠে এক ছন্দময় গল্প—যেখানে প্রতিটি ফোঁটা বৃষ্টি বলে যায় তারুণ্যের অমলিন অনুভূতির কথা।
এই আবেশময় পরিবেশে শিক্ষার্থীরা খুঁজে পান বেঁচে থাকার আনন্দ, পথ চলার প্রেরণা এবং ভবিষ্যতের জন্য কিছু অমূল্য স্মৃতি। প্রকৃতির এই অনুপম রূপে ভেসে যায় ক্লান্তি, জেগে ওঠে নতুন স্বপ্ন—মাভাবিপ্রবির বৃষ্টি তাই হয়ে ওঠে তরুণ প্রাণের এক রঙিন স্বপ্নলোক।
মন্তব্য করুন