বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তায় সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে নীতিগত সহায়তার দাবি উঠেছে।
বুধবার (৪ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ এর প্রাক্কালে পরিবেশ সংরক্ষণ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ জেলার চরঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কৃষিজমিতে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশ সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান। ‘এগ্রোভোল্টাইক্স’ বা ‘বিজলি কৃষি’ বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই আয়োজন করে অন্যচিত্র ফাউন্ডেশন, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) এবং বাংলাদেশ প্রতিবেশ ও উন্নয়ন কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি)। চরাঞ্চলের কৃষি জমিতে অনুষ্ঠিত এই ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশকর্মী, স্থানীয় কৃষক, যুব সংগঠক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
উক্ত কর্মসূচিততে এগ্রোভোল্টাইক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে একই জমিতে কৃষিকাজ ও সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের যৌথ সম্ভাবনা এবং এর প্রভাব তুলে ধরা হয় পোস্টার প্রদর্শনী, মাঠপর্যায়ের কর্মসূচি, ভিডিও বার্তা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণার মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অন্যচিত্র ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী রেবেকা সুলতানা বলেন: “বাংলাদেশের জমি সীমিত, অথচ বিদ্যুৎ ও খাদ্য চাহিদা ক্রমবর্ধমান। এগ্রোভোল্টাইক্স এই দুই সংকটের যুগপৎ সমাধান দিতে পারে। এতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়, কৃষকের আয় বাড়ে এবং গ্রামীণ জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয়।” ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য ইমন সরকার বলেন: “এই চরাঞ্চল, যা একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ, অন্যদিকে অবকাঠামোগত সুবিধাবঞ্চিত—সেখানে এগ্রোভোল্টাইক্স প্রযুক্তি প্রয়োগ করে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষির উৎপাদন বজায় রাখা সম্ভব। এটি স্থানীয় পর্যায়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
এসময় ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সদস্য সচিব জান্নাতুল ফেরদৌস মীম বলেন: “কৃষকের জমি রক্ষা ও তাদের টেকসই জীবিকার পথ খুলে দিতে রাষ্ট্রীয় নীতিতে এগ্রোভোল্টাইক্সের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত জরুরি। এই প্রযুক্তির প্রসারে সরকারকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।” ময়মনসিংহ সদর উপজেলা যুব ফোরামের আহ্বায়ক মামুন মিয়া বলেন: “তরুণদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই প্রযুক্তির সচেতনতা বাড়ানো গেলে ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব কৃষি ও জ্বালানির যুগে প্রবেশ সহজ হবে। এই ক্যাম্পেইন তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করেছে।”
আয়োজক সংগঠনসমূহ সরকারের প্রতি তিন দফা দাবি উত্থাপন করে: ১. এগ্রোভোল্টাইক্স বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নীতিমালার প্রণয়ন। ২. দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরীক্ষামূলক মডেল প্রকল্প বাস্তবায়ন। ৩. কৃষক ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান
পরিবেশবাদীরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, কৃষিজমি রক্ষা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস বৃদ্ধির লক্ষ্যে এগ্রোভোল্টাইক্স হতে পারে বাংলাদেশের জন্য একটি বাস্তবভিত্তিক ও টেকসই সমাধান। বিশেষত চরাঞ্চলের মতো প্রান্তিক এলাকায় এটি কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। এই প্রচারাভিযানটি ছিল শুধুমাত্র একটি প্রচলিত অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি ছিল একটি নতুন চিন্তার জন্ম। এতে উঠে এসেছে পরিবেশ, জ্বালানি ও কৃষির সমন্বিত ভবিষ্যতের বাস্তব রূপরেখা। আয়োজকরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করা হবে এবং সরকারের সঙ্গে সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে নীতিগত অগ্রগতির চেষ্টা চলবে।
ক্যাম্পেইন প্রোগ্রামে আরও উপস্থিত ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান, রাকিবুল হাসান, কথা আক্তার, জিৎ সরকার, মোখলেসুর রহমান,আতাউর রহমান, সোহাগ, সুব্রত বর্মণ, পনি প্রমুখ।
ছবি-সংযুক্ত
মন্তব্য করুন