কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার মুঠা পাটশাক। সকালে বিভিন্ন বাজারে কৃষকরা এটি পাইকারি দরে বিক্রি করছেন। আগে যে শাক ফেলে দিতেন, এখন তা বিক্রি করে পাচ্ছেন বাড়তি আয়। খুচরা বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় লাভ করছেন ব্যবসায়ীরাও। পাটশাকের পুষ্টিগুণ জানার পর এর কদর বেড়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা আরও লাভবান হবেন।
উপজেলার পৌর বাজার ছাড়াও শহিদ নগর, সুন্দুলপুর, ঢাকারগাঁও, জুরানপুর, গোয়ালমারী, গৌরীপুর, ইলিয়টগঞ্জ, রায়পুর বাজারে প্রতিদিন সকালে পাটশাক বিক্রি হয়। সকাল ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে পাইকারি দরে প্রতি মুঠা পাটশাক ৬ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি করেন কৃষকরা। এতে তারা লাভবান হচ্ছেন।
চেঙ্গাকান্দি গ্রামের কৃষক আজিজুল মিয়া বলেন, ‘আমি ৩ কানি জমিতে পাটের চাষ করেছি। দুই-তিন দিন পর পর পাটখেত নিরাই করতে হয়। নিরাই করার সময় যেসব গাছ তুলতে হয়, সেগুলো আঁটি করে বাজারে বিক্রি করি। এতে বাড়তি আয় হয়। খুচরা বাজারে প্রতি মুঠা পাটশাক ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করি।’
গোলাপের চর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী কৃষক জব্বর ব্যাপারী বলেন, ‘আগে পাটশাক ফেলেই দিতাম। তিতা হওয়ায় গরু-বাছুরও খেত না। গ্রামের মানুষও কম খেত। এখন বাজারে অনেক চাহিদা, তাই বিক্রি করতে এনেছি।’
ভেলানগর গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি মূলত পাটচাষ করেছি সোনালি আঁশ পাটের জন্য। এখন দেখি প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার পাটশাক বিক্রি করতে পারি। ১০ বছর আগেও এত চাহিদা ছিল না। এখন দিনদিন চাহিদা বাড়ছে। আগে যেটা ফেলে দিতাম, সেটাই এখন বিক্রি করে লাভ করছি।’
গৌরীপুর বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মনু মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার পাটশাক পাইকারি কিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা লাভ হয়। আগে দুই-তিনজন পাইকার ছিল। এখন পাইকারের সংখ্যা বাড়ছে।’
জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক মতিন সৈকত বলেন, ‘পাটশাক খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এতে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। পাটশাক ভাজি, ডালের সঙ্গে বা অন্যান্য উপায়ে খাওয়া যায়। আমাদের দেশে যে ঋতুতে যে রোগ হয়, সে সময়কার শাকসবজিতেই থাকে প্রতিকার। পাটশাক এমন এক সময়ে পাওয়া যায়, যখন পেটের সমস্যা বেশি হয়। যাদের দীর্ঘস্থায়ী পেটের সমস্যা, তাদের জন্য পাটশাক খুবই উপকারী। অন্যান্য শাক খেলে গ্যাস্ট্রিক বা পেটের সমস্যা হয়, কিন্তু পাটশাক খেলে তেমন হয় না। পাটশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এটি ঠাণ্ডা-কাশি কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।’
গোয়ালমারী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এক কেজি করে পাটবীজ ১২০ কৃষককে সরকারি প্রণোদনায় বিতরণ করা হয়েছে। সার বরাদ্দ না থাকায় দেওয়া যায়নি। তবে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সহায়তা করা হয়েছে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং রোগবালাই না হলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
মন্তব্য করুন