সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের উপর খেশরা শালিখা ব্রিজ নির্মাণের মাঝ পথে হারিয়ে গেছে ঠিকাদার কোম্পানির লোক জন। গত ১০ বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। গত বছর ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে এলাকার লোক জন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা অবিলম্বে কাজ শেষ করে জন দুর্ভোগ লাঘব করার জোরালো দাবী জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান,নদের এক পাশে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেরশা ইউনিয়ন ও অপর পাশে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লাড়ুলি ইউনিয়ন অবস্থিত। দুই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের লাখো মানুষ দীর্ঘ দিন এই নদের উপর নির্মিত এক মাত্র বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারা পার হচ্ছে। যার কারণে তাদের দাবি ছিল এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করার। তাদের সেই দাবী পুরণ করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সড়কে ২১৫০ মিটার চেইনেজে কপোতাক্ষ নদের উপর ৮০ মিটার ব্রিজ ও ৪৪ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রাক্কলিত ১১ কোটি ৮০ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৮ টাকা ও চুক্তিকৃত মূল্য ১১ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
পাইকগাছা এলজিইিডি অফিস সুত্রে জানা যায়, খুলনার জিয়াউল টেডার্স নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজটি নির্মাণের কাজ পায়। তারা সঠিক সময়ে কাজটি শুরুও করে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ,পিলার নির্মাণ,বেইজ ঢালাই সহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ করতে করতে হঠাৎ ৫ আগষ্ঠের পর তারা লাপাত্তা হয়ে যায়। রাতের আঁধারে ধীরে ধীরে তারা সকল যন্ত্রাংশ সরিয়ে নিয়ে গেছে। বর্তমানে ব্রিজ নির্মাণের আর কোনো লক্ষন দেখা যাচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা গেছে,নদের দুপারে অসম্পন্ন ৪টি পিলার নির্মাণ করে রাখা হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু বালু আর খোয়া। কাটিপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান,আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবীর মুখে বিগত সরকার এখানে একটি ব্রিজ করার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী ঢাক ঢোল পিটিয়ে কাজও শুরু করা হয়। অনেক আশা ছিলো ব্রিজটি নির্মাণ হলে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি ফিরে আসবে। কিন্তু কাজ ফেলে মাঝ পথে ঠিকাদার লাপাত্তা হওয়ায় এলাকার মানুষের মাঝে আবার হতাশা ফিরে এসেছে। বাঁশের সাঁকো পার হওয়ার সময় লাড়ুলি গ্রামের ইজি বাইক চালক নূর ইসলাম বলেন,এই যুগেও যদি এতো বড় নদী সাঁকো দিয়ে পার হতে হয় তাহলে কত পিছিয়ে রয়েছি আমরা। বরাবরই এ অঞ্চলের মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত। কয়রা পাইকগাছা ও আশাশুনি উপজেলার মানুষ খুব সহজে এ পথে খুলনা ও সাতক্ষীরায় জেলা শহরে যেতে পারে। এতে করে পথ ও সময় কম লাগে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আবুল হোসেন জানান,৫ আগস্টের পর ব্রিজের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা বাড়ি চলে যায়। তাদের পাওনা টাকা দিতে না পারায় তারা আর কাজে যোগ দেয়নি। এ ছাড়া বিল উঠানো নিয়ে উপজেলা এলজিইডি অফিসে একটু সমস্যা হচ্ছে। সেটার সমাধান হয়ে গেলে আবার কাজ শুরু করতে পারব।
উপজেলা প্রকৌশলী মো.শাফিন শোয়েব জানান, শালিখা ব্রিজের কাজ শেষ করার জন্য নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কয়েক বার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তিনি কোনো গুরুত্ব দেয়নি। উপয়ান্তর না পেয়ে অব শেষে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কাজ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। তিনি যদি কাজ না করেন তাহলে নতুন করে টেন্ডার আহবান করা হবে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, জন গুরুত্বপূর্ণ ব্রীজটি যে অসম্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে সেটা আমি শুনেছি। এলজিইডি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে এখানে যেনো দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণ কাজ পূণরায় শুরু করা যায় আমি তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য করুন