চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট (সিডিএসপি) আওতাধীন বাঁধের একাধিক অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মুহুরী সেচ প্রকল্প সংলগ্ন এলাকায় ইতোমধ্যে মীরসরাই ও পাশের সোনাগাজী অংশে নদীভাঙনে প্রায় ২০০ একর মাছের ঘের সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। ঝুঁকির মুখে রয়েছে আরও অন্তত ৫০০ একর এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে মীরসরাইয়ে গড়ে ওঠা ৩৪ হাজার একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বিইজেড) প্রকল্পও হুমকির মুখে পড়বে। বাঁধ ভেঙে গেলে লবণাক্ত পানি ঢুকে উপজেলার ওচমানপুর ও ইছাখালী ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রামে দেখা দিতে পারে জলাবদ্ধতা এবং কৃষি ও গৃহস্থালি ব্যবস্থায় ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলবে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মুহুরী সেচ প্রকল্পের ভাটির দিকে প্রায় ১১শ বর্গমিটার এলাকায় পলি জমে নদীর প্রবাহপথ পরিবর্তিত হয়েছে। এর ফলে সোনাগাজীর থাক খোয়াজের লামছিতে নতুন চর জেগেছে, আর মীরসরাইয়ের উত্তর ইছাখালী অংশে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। পলি জমার কারণে সেচ প্রকল্পের বেশ কিছু স্লুইসগেট অকার্যকর হয়ে পড়েছে। একসময় যেসব জায়গায় নদী ও সাগর থেকে বাঁধের দূরত্ব ছিল ৩ হাজার মিটার, সেখানে এখন কোথাও ১০ মিটার, কোথাও মাত্র ৫ মিটার ব্যবধান রয়ে গেছে। উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরের ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ১৯৯৪ সালে নির্মিত এ সিডিএসপি বাঁধকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল শত শত মাছের খামার। এসব খামার দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের মাছের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করে আসছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করছেন স্থানীয় খামারি ও বাসিন্দারা।
ইউএনও মাহফুজা জেরিন জানান, বাঁধ রক্ষায় উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রশান্ত তালুকদার বলেন, বাঁধ রক্ষায় ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে জিও ব্যাগ ফেলার মাধ্যমে মেরামতের কাজ দ্রুত শুরু হবে। মৎস্য খামার মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামত ও সুরক্ষা ব্লক বসানোর দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে মীরসরাইয়ের উপকূলীয় এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বড় ধরনের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
মন্তব্য করুন