নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বাতাসি গ্রামে স্ত্রী'র পরকিয়ার জেরে স্বামীকে গ্রাম্য সালিশে জুতাপেটা করার ঘটনা ঘটেছে।ও শুধু তাই নয়, জুতাপেটা শেষে ওই পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশও দিয়েছেন মাতুব্বররা।
গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের বাতাসী গ্রামে এক শালিসি বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (২০ জুন) দুপুরে এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে , উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের বাতাসী গ্রামের বাসিন্দা নিজামুদ্দিনের (৩০) স্ত্রীর কথিত পরকীয়ার নাটক সাজিয়ে ' স্বামী ঘর ছেড়ে অন্য পুরুষের সাথে চলে গিয়ে আবার স্বামীর ঘরে ফিরে আসা'র অভিযোগ এনে ওই গ্রামের মাতুববর নড়াইল জেলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য শহীদ খাঁনের নেতৃত্বে কয়েকজন প্রভাবশালী মাতুব্বর গত ১৭ জুন এক শালিস বৈঠকে এক রায় ( বিচার) ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠিত সালিশে 'স্ত্রী'র বিরুদ্ধে কথিত পরকীয়ার অভিযোগে স্বামী নিজামুদ্দিনকে জুতাপেটা করা হয়। শুধু জুতাপেটা করে ক্ষান্ত হননি মাতুব্বররা। জুতাপেটার পাশাপাশি নিজামুদ্দিন ও তার পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেন ওই মাতুব্বররা।
ঘটনার ৩ দিন পর নিজামুদ্দিনের বাড়িতে স্হানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা হাজির হলে নিজামুদ্দিন ও তার স্ত্রী বক্তব্য দিতে রাজি হয় নাই। কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীরস সুকৌশলে স্বামী-স্ত্রী বক্তব্য নেন। পরবর্তীতে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুক্রবার দুপুরে ছড়িয়ে পড়লে সবার নজরে আসে।
উল্লেখ্য যে, নাজিমুদ্দিনের আদি বাড়ি নোয়াখালী। বৈবাহিক সূত্রে লোহাগড়ার বাতাসী গ্রামে স্ত্রী ও এক সন্তান নিয় বসবাস করে আসছেন।
এ ব্যাপারে নিষিদ্ধ আওমীলীগ নেতা শহীদ খাঁনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'নিজামুদ্দিনের স্ত্রী পরকিয়ায় জড়িত ছিলেন।ওই নারী সম্প্রতি স্বামীর ঘর ছেড়ে অন্য পুরুষের সাথে চলে গিয়ে আবার স্বামীর ঘরে ফিরে আসেন। যে কারণে গ্রাম্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তাকে শাস্তিস্বরুপ জুতাপেটা করা হয়েছে। এছাড়া তাকে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
এ ধরনের রায় আইনসিদ্ধ কিনা সে ব্যাপারে তিনি বলেন, 'মুরুব্বীরা গ্রাম্যভাবে সালিস করে বিভিন্ন ঘটনার বিচার করতেন। সেই বয়ে আসা রেওয়াজের ধারাবাহিকতায় এ সালিশটি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাইনি। বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবু রিয়াদ বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নাই। তবে তিনি বলেন, 'একজন মানুষকে কেউ বাড়ি ছাড়ার ক্ষমতা রাখে না'। খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন