লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে দিনদিন বাড়ছে ফার্মেসির সংখ্যা। তবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো বেশিরভাগ ফার্মেসিই পরিচালিত হচ্ছে অনভিজ্ঞ, অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে। ওষুধ বিক্রির লাইসেন্স থাকলেও, তারা চিকিৎসকের ভূমিকা নিয়ে নানা ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করছেন রোগীদের ওপর, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে অপ্রয়োজনে ও ভুলভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের কারণে রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা (অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স) আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
আইসিডিডিআরবি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে কিছু সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের হার ইতোমধ্যে ৬০%-৭০% ছাড়িয়ে গেছে।
এর ফলে আগের মতো চিকিৎসা কার্যকর হচ্ছে না, জটিল রোগে মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করা একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা হবে এক নীরব দুর্যোগ।
ফার্মেসির আড়ালে এখন যেন গড়ে উঠেছে একেকটি ‘অপেশাদার ক্লিনিক’। রোগীর জ্বর, ব্যথা কিংবা ইনফেকশন দেখা দিলেই তারা নিজ সিদ্ধান্তে অ্যান্টিবায়োটিক, ইনজেকশন এমনকি স্যালাইন প্রয়োগ করছেন, যা একমাত্র রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক ছাড়া দেয়া বেআইনি। এইসব ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ প্রয়োগ রোগীর জন্য বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে পারে—হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা এমনকি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মতো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অভিযোগ আছে, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত ‘স্যাম্পল ওষুধ’ পর্যন্ত তারা রোগীদের কাছে বিক্রি করছেন। যা একদিকে যেমন আইন লঙ্ঘন, অন্যদিকে তেমনি রোগীর জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
স্থানীয় এক ভুক্তভোগী বলেন, “গলা ব্যথা নিয়ে একটি ফার্মেসিতে যাই। সেখানে ইনজেকশন ও বেশ কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক দেয়। এরপর শরীরের অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।”
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ওষুধপ্রদানকারীকে অবশ্যই অনুমোদিত ফার্মাসিস্ট হতে হবে এবং রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বা ইনজেকশন প্রয়োগ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। অথচ এসব নীতিমালা অনেক ফার্মেসিতেই অবলীলায় উপেক্ষা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, “অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ ছাড়া ফার্মেসিতে চিকিৎসা দেওয়া বন্ধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অবিলম্বে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো এবং অননুমোদিতভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া ফার্মেসিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও ওষুধ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সচেতন এলাকাবাসী।
মন্তব্য করুন