প্রিন্ট এর তারিখঃ Jun 19, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ May 11, 2025 ইং
সালথায় লোক ভাড়া করে প্রতিপক্ষের ৩০ বাড়ি ভাঙচুর-লুট ও আগুন কলেজ প্রভাষকের

ফরিদপুরের সালথায় যুবলীগ নেতার পক্ষ নিয়ে সহস্রাধিক লোক ভাড়া করে এনে প্রতিপক্ষের অন্তত ৩০টি বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সালথা সরকারি কলেজের এক প্রভাষকের বিরুদ্ধে। আজ শনিবার (১০ মে) সকালে উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া গ্রামে এ হামলা চালানো হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, সম্প্রতি আকিকার মাংস ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় রাঙ্গারদিয়া গ্রামের উজ্জল মোল্যার সাথে তার আপন ভাই ফারুক মোল্যার বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জেরে উজ্জলের ছেলেকে জুতা দিয়ে পেটায় তার ভাই ফারুক। এর মধ্যে উজ্জল মোল্যা স্থানীয় যুবলীগ নেতা ফরহাদ মোল্যার সমর্থক আর ফারুক মোল্যা জালাল মাতুব্বরের সমর্থক। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। উত্তেজনার মধ্যেই যুবলীগ নেতা ফরহাদ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নান্নুকে সমর্থন করেন স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সালথা সরকারি কলেজের বাংলা প্রভাষক শাখাওয়াত হোসেন জয়নাল।
শনিবার সকালে প্রভাষক শাখাওয়াত হোসেন জয়নাল পাশের যুদনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া, সোনাপুর ও রঙ্গরায়েরকান্দী গ্রাম থেকে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ সহস্রাধিক লোক ভাড়া করে এনে রাঙ্গারদিয়া গ্রামের জালাল মাতুব্বরের সমর্থকদের অন্তত ৩০টি বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট করে। এ সময় আব্দুল হাই নামে এক ব্যক্তির একতলা বিল্ডিংয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ও দুটি ঘর ভাঙচুর করা হয়।
এছাড়াও রাঙ্গারদিয়া গ্রামের খোকন মোল্যার ৩টি, রোকন মোল্যার ৩টি, মান্নান মোল্যার ৩টি, রফিকের ২টি, মাসুদের ১টি, নুরুল ইসলামের ২টি লিয়াকতের ৪টি, ইলিয়াসের ২টি, ইদ্রিসের ২টি ও ওবায়দুর খার ২টি বসতঘরসহ অন্তত ৩০টি বসতঘর ভাঙচুর ও লুট করা হয়। হামলার সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির নারী ও শিশুরা ভয়ে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করতে থাকে।
ক্ষতিগ্রস্ত মান্নান মাতুব্বর বলেন, আমি কোনো রাজনীতি করি না। তবে ২০১৪ সালে বিএনপির নেত্রী শামা ওবায়েদ আমার বাড়িতে আসে। এরপর পর থেকে যুবলীগ নেতার ফরহাদ ও তার সমর্থকরা আমার বাড়িতে কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে। আমার কয়েকটি গরুও নিয়ে গেছে। শনিবার সকালে কোনো কারণ ছাড়াই প্রভাষক জয়নাল ও যুবলীগ নেতা ফরহাদ খারদিয়া, রঙ্গরায়েরকান্দী ও সোনাপুর থেকে শতশত লোক ভাড়া করে এনে অতর্কিতভাবে আমার বাড়িসহ অন্তত ৪০টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয় ও লুটতারাজ করে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
আব্দুল হাই বলেন, আমার একতলা বাড়ির ভেতরে হামলাকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ভয়ে আমরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাই। শুধু আমার একার নয়, আমার মতো অন্তত ৪০টি বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। গরু-ছাগল ও মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।
তবে এই হামলায় নিজের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত প্রভাষক শাখাওয়াত হোসেন জয়নাল বলেন, হামলা হয়েছে আমার পাশের গ্রামে। আকিকার মাংস ভাগাভাগি নিয়ে রাঙ্গারদিয়া গ্রামের নান্নু মাতুব্বর ও জালাল মাতুব্বরের সমর্থকদের মধ্যে মারামারির জেরে ওই হামলা হয়েছে। অতএব এই হামলার সাথে আমি কোনোভাবেই জড়িত না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির কোনো পদে আমি নেই। তবে আমি বিএনপি করি। তাই যুবলীগ নেতাকে আমার সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, কয়েক গ্রামের লোক এসে রাঙ্গারদিয়া গ্রামের একটি পক্ষের লোকজনের বসতবাড়িতে হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্বত্ব © দৈনিক জনতার খবর ২০২৫ | ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।