নাসির মাহমুদ
ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্মীপুরের রামগতির মেঘনা নদীতে চলছে প্রকাশ্যে জাটকা নিধন। আর এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের পেছনে নৌ-পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। প্রতি নৌকা থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে মা ইলিশ ধরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলেরা।
জানা গেছে, রামগতি উপজেলার বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সফিকুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন বড়খেরী ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসমাইলের মাধ্যমে চলছে এই চাঁদাবাজি। নৌকা প্রতি ১৫ হাজার টাকা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছেন এই ইসমাইল, যিনি স্থানীয় নুরুল ইসলামের ছেলে।
মাছ শিকারে যাওয়া তিনজন জেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিষেধাজ্ঞার পুরো ২১ দিনের জন্য প্রতি নৌকা ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে মাছ শিকার করতে দিচ্ছে নৌ-পুলিশ। যারা এককালীন টাকা দিতে পারছেন না, তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে অন্তত ২৫টি নৌকা নৌ-পুলিশ ও যুবলীগ নেতা ইসমাইলের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত নদীতে মাছ ধরছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে রামগতি বাজার মাছঘাটের পূর্বপাশ ও ব্রীজঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন জেলে অবাধে নদীতে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে কোনো ভয়ভীতির চিহ্ন নেই। বরং একজন জেলে হাসতে হাসতে বলেন, “ভাই, ছবি তুলে কি করবেন? আমরা সব লাইনঘাট ঠিক করে আসছি। ১৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছি ইসমাইল ভাইয়ের কাছে।”
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নৌ-পুলিশের চাঁদাবাজির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সেটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
স্থানীয় জেলে সালাহ উদ্দিন ও দিদার মাঝি বলেন, তারা নৌ-পুলিশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নদীতে যাচ্ছেন। তবে টাকার পরিমাণ প্রকাশে তারা অনীহা প্রকাশ করেন।
ভুক্তভোগী খুরশিদ মাঝি জানান, “নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে ইসমাইল ভাই ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। টাকা দেওয়ার পরই আমরা নদীতে নামতে পারি।”
আরেক জেলে আবুল কালাম মাঝি বলেন, “প্রায় ২৫টি নৌকা নিয়মিত নদীতে যায়। যারা টাকা দেয়নি, তাদের নৌকা নদীতে নামলেই পুলিশ আটক করে।”
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ইসমাইল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সব অভিযোগ গুজব। কে বা কারা এসব ছড়াচ্ছে জানি না।” তবে প্রতিবেদককে তিনি “ম্যানেজ করার” প্রস্তাব দেন বলেও জানা গেছে।
বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সফিকুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ভাই, আপনি আমার সঙ্গে দেখা করেন”—এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে নৌ-পুলিশের এমন কোনো কর্মকাণ্ড থাকলে তারাই জবাবদিহি করবে।”
রামগতি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সৌরভ উজ জামান বলেন, “নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আমরা লোকমুখে শুনেছি। ইতিমধ্যে কয়েকটি নৌকা আটক করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
প্রসঙ্গত, মা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে চলতি মাসের ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা, বিক্রি ও মজুদের ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কিন্তু রামগতি এলাকায় সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে চলছে নৌ-পুলিশের বাণিজ্য আর জাটকা নিধনের উৎসব।
চাঁদপুর নৌ-অঞ্চলের পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।