প্রিন্ট এর তারিখঃ Oct 21, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Oct 21, 2025 ইং
শ্যামা পূজা, ব্যস্ততায় সময় কেটেছে মৃৎশিল্পী ও আয়োজকদের

মুখলেছুররহমান হীরা
সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হওয়ার পর চলছে দীপাবলি বা শ্যামা পূজার শেষ সময়ের প্রস্তুতি। আজ রাত থেকে শুরু হবে পূজা, তাই প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে প্রতিমায় রং করা ও মণ্ডপের প্যান্ডেল সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বারহাট্টার মৃৎশিল্পী ও আয়োজকরা।
ধর্মীয় পঞ্জিকামতে, ২০ অক্টোবর সোমবার অমাবস্যা তিথিতে শুরু হয়ে আগামী ২২ অক্টোবর বুধবার দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শ্যামা পূজার। শাস্ত্রমতে, শ্যামা পূজা অমাবস্যা তিথিতে একদিন হলেও বড় মণ্ডপগুলোতে আনন্দ উপভোগের জন্য আয়োজন চলে তিন দিনব্যাপী।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, সময় যতই এগিয়ে আসছে, মন্ডপ গুলোতে বাড়ছে মৃৎশিল্পীদের শেষ সময়ের ব্যস্ততা। ইতোমধ্যে খড় ও মাটির কাজ শেষ করে এখন শেষ মুহূর্তে চলছে রংতুলির আঁচড়ে প্রতিমা ফুটিয়ে তোলার কাজ। নাওয়া-খাওয়া আর ঘুম বাদ দিয়ে কালী প্রতিমার পাশাপাশি দেবাদিদেব মহাদেব, ডাকিনী, যোগিনীসহ অন্যান্য দেব-দেবীর প্রতিমায় রংতুলির কাজ করছেন শিল্পীরা। এছাড়াও ডেকোরেশন ও লাইটিংয়ের মাধ্যমে নানা ধর্মীয় দৃশ্যপট তুলে ধরছেন মণ্ডপগুলোতে। বারহাট্টার বড় বাজেটের পূজাগুলোর মধ্যে উপজেলা সদরের গরুহাট্টা, মোরগ মহাল, শিববাড়ী, আসমা বাজার, বৃ-কালিকা পূজামণ্ডপ উল্লেখযোগ্য।
বারহাট্টা উপজেলা সদরের সবচেয়ে বড় বাজেটের পূজা গরুহাট্টা পূজামণ্ডপের প্রতিমা কারিগর মৃৎশিল্পী সুবল পাল বলেন, আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। প্রতিমা তৈরির কাঁচামাল বা জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। চারুকলা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ পেশা বেছে নিয়েছি। লাভ কম, তবুও নিজের শিক্ষার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এখনো বিভিন্ন পূজায় প্রতিমা তৈরির কাজ করছি।
মোরগ মহাল পূজামণ্ডপের মৃৎশিল্পী অখিল পাল বলেন, যে কোনো পূজা আসলেই আমাদের কদর বাড়ে। প্রতিমা তৈরির জন্য আমাদের ডাক পড়ে। তখন আমাদের ব্যস্ততা বাড়ে। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। তবে কাঁচা মালামালের দাম যে তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, সে অনুযায়ী প্রতিমা তৈরির পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পায়নি। তবে লাভ কম হলেও পৈতৃক পেশা ধরে রেখে প্রতিমা তৈরি করছি, যাতে পেশার পূর্ণতা পাওয়া যায়।
বারহাট্টা উপজেলা পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক প্রদীপ সরকার শ্যামল জানান, এবার বারহাট্টায় স্থায়ী-অস্থায়ী মণ্ডপ মিলিয়ে প্রায় ৩০টি মণ্ডপে কালীপূজা উদযাপিত হচ্ছে। কালীপূজাকে সামনে রেখে বরাবরের মতোই এবারো প্রস্তুতি চলছে প্রতিটি মণ্ডপে। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ, এখন চলছে রংয়ের কাজ।
পুরোহিত রুপক চক্রবর্তীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ২০ অক্টোবর সোমবার দুপুর ৩টা ৪৪ মিনিটে কার্তিক কৃষ্ণ অমাবস্যা তিথি শুরু হচ্ছে এবং শেষ হবে ২১ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৫টা ৫৪ মিনিটে। অমাবস্যা তিথিতে মাঝরাতে কালীর আরাধনা করা হয়। ২০ অক্টোবর মাঝরাতে অমাবস্যা তিথি থাকায়, এদিন কালী পুজো করা হবে। এ দিন নিশিত কাল থাকবে রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে রাত ১২টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত।
বারহাট্টা সদরের সবচেয়ে বড় বাজেটের কালীপূজাগুলোর মধ্যে অন্যতম গরুহাট্টা পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন রায়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমাদের এলাকার হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলেমিশে দুর্গাপূজার আনন্দ যেমন উপভোগ করেছি, আশা করছি তেমনি বরাবরের মতোই এবারো শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যদিয়ে সকলে মিলেমিশে কালীপূজার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।
স্বত্ব © দৈনিক জনতার খবর ২০২৫ | ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।