আজ বিশ্ব বই দিবস। দিনটিকে অনেকে ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’ও বলে থাকেন। বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণসহ ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ২৩ এপ্রিল জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়। বই দিবস হিসেবে দিনটিকে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ সাহিত্যজগতের তিন কিংবদন্তী উইলিয়াম শেকস্পিয়ার, মিগেল দে থের্ভান্তেস ও ইনকা গার্সিলাসো দে ভেগার প্রয়াণ দিবস ২৩ এপ্রিল।
১৯৯৫ সালে প্যারিসে ইউনেসকোর সাধারণ অধিবেশনে দিনটিকে বই দিবস হিসেবে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্বের পাঠকেরা দিনটি উদ্যাপনে নানা কর্মসূচি পালন করেন।
তবে পৃথিবীতে বই পড়া মানুষের সংখ্যা কমা নিয়েও বিশেষজ্ঞরা নানা কথা বলেন। এর মধ্যে আজ দেখা নেওয়া যাক, বিশ্বের কোন দেশের মানুষ বেশি বা কম বই পড়েন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বই পড়া শুধু বিনোদনের উপায় নয়, বরং কাজের চাপ, শিক্ষাজীবনের ক্লান্তি কিংবা ব্যক্তিগত জীবনের সংকট থেকে মুক্তি পেতেও বই হয়ে ওঠে তাদের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়।
এদিকে সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন কোন দেশের নাগরিকেরা কত বই পড়েন, বই পড়ায় কত সময় যায়, তা নিয়ে একটি জরিপ করে। পাঠকের ওপর চালানো সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের জরিপে উঠে এসেছে নানা তথ্য। বিশ্বের ১০২টি দেশে এ জরিপ চালানো হয়। দেশগুলোর পাঠকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বই পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা। বছরে গড়ে ১৭টি বই পড়েন তাঁরা। বই পড়ে শেষ করার ক্ষেত্রে তাদের পরেই ভারতীয়রা। বছরে গড়ে ১৬টি বই পড়েন ভারতের নাগরিকেরা। আমেরিকানরা বছরে বইয়ের পেছনে ব্যয় করেন ৩৫৭ ঘণ্টা, ভারতীয়রা ৩৫২ ঘণ্টা। বাংলাদেশও আছে এই তালিকায়, তবে তা ৯৭তম অবস্থানে।
ই-বুক বা অডিও বুকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়লেই যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয় পাঠকেরা এখনো কাগজের বইয়ের ডুবে থাকেন। কাগজের বইয়ের আবেদন তাঁদের কাছে একটুকু কমেনি। প্রযুক্তির এ সময়ে তাঁরা হাতে বই আনন্দে মাতেন।
২০২৪ সালে ৬ লাখ ৫০ হাজারের বেশি পাঠকের ওপর চালানো জরিপের ভিত্তিতে সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন এ তথ্য জানিয়েছে।
তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা দেশটি যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ নাগরিকেরা বছরে গড়ে ১৫টি বই পড়েন। বইয়ের পেছনে ব্যয় করেন ৩৪৩ ঘণ্টা। যুক্তরাজ্যের পরই আছে ফ্রান্স। দেশটির একজন পাঠক বছরে গড়ে ১৪টি করে বই পড়েন, বইয়ের পেছনে ফ্রান্সের নাগরিকদের সময় যায় ৩০৫ ঘণ্টা।
সবচেয়ে বেশি বই পড়ার তালিকার পঞ্চম স্থানের দেশটি ইতালি। বছরে গড়ে ১৩টি বই পড়েন দেশটির পাঠকেরা। বইয়ের পেছনে ব্যয় করেন ২৭৮ ঘণ্টা। আর প্রতি মাসে একটি করে বই পড়েন কানাডার পাঠকেরা। বছরে ১২টি বইপড়ুয়ার দেশের নাগরিকেরা বইয়ের পেছনে সময় ব্যয় করেন ২৩২ ঘণ্টা।
কানাডার পরই আছে রাশিয়া। সপ্তমে থাকা দেশটির নাগরিকেরা বছরে ১১টি বই পড়েন। বই পড়ার পেছনে সময় ব্যয় করেন ২২৩ ঘণ্টা। অষ্টমে থাকা দেশটির নাম অস্ট্রেলিয়া। বছরে ১০টি বই পড়ে শেষ করেন অস্ট্রেলিয়ানরা। বছরের ২১৭ ঘণ্টা সময় বই পড়েন তাঁরা।
এরপরই নবম স্থানে আছে স্পেন। বছরে ১৮৭ ঘণ্টা সময় বইয়ের পেছনে ব্যয় করেন স্প্যানিশরা। বছরে বই পড়েন গড়ে ৯টি। স্পেনের পরের স্থান অর্থাৎ ১০ম স্থানে থাকা দেশটি টিউলিপের দেশ নেদারল্যান্ডস। গড়ে বছরে ৮টি বই পড়েন এ দেশের পাঠকেরা। আর বইয়ের পেছনে সময় কাটে ১৮২ ঘণ্টা।
এদিকে জরিপ অনুযায়ী বই পড়ার ক্ষেত্রে পেছনের দিকে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশ আছে ৯৭তম অবস্থানে। একজন বাংলাদেশি বছরে গড়ে বই পড়েন মাত্র তিনটি (২ দশমিক ৭৫)। বই পড়ায় বছরে আমাদের পাঠকের সময় কাটে মাত্র ৬২ ঘণ্টা।
বাংলাদেশের পরই ৯৮তম স্থানে আছে আরব আমিরাত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির নাগরিকেরা বছরে গড়ে ২ দশমিক ৭১টি বই পড়েন। আর বই পড়তে সময় যায় ৬০ ঘণ্টা।
আরব আমিরাতের পরে ৯৯তম অবস্থানে আছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সৌদি আরব। দেশটির নাগরিকেরা বছরে গড়ে ২ দশমিক ৬৯টি বই পড়েন। আর বই পড়তে সৌদিদের সময় যায় ৬০ ঘণ্টা। ১০০তম অবস্থানে আছে পাকিস্তান। বছরে ২ দশমিক ৬টি বইপড়ুয়া পাকিস্তানিরা বছরে বইয়ের পেছনে ব্যয় করেন ৬০ ঘণ্টা।
বিশ্বের অন্যতম একটি ম্যাগাজিন সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক ম্যাগাজিনটি সিইও, সিএফওসহ উচ্চস্তরের নির্বাহী পেশাদার, ব্যবসায়ী নেতা ও ব্যক্তিদের জন্য নানা খবর প্রকাশ করে। বছরে ১ কোটি ২৪ লাখ পেজভিউয়ের ম্যাগাজিনটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন।