প্রিয়, এসএসসি পরীক্ষার্থী, এরপরই গণিত পরীক্ষা (২১ এপ্রিল)। গণিত সিলেবাসের নির্ধারিত বিষয়বস্তু অনুশীলন করা শুরু করে দাও। তুমি একজন দায়িত্ববান শিক্ষার্থী। তুমি তোমার দায়িত্বের প্রতি অনেক যত্নশীল। সারা বছর ঠিকমতো গণিত অনুশীলন করেছ। তাই তোমার মনোবল অনেক, আত্মবিশ্বাসও অনেক। তাই গণিতকে ভয় পাওয়া কিছু নাই। পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্রটি হাতে পেয়ে প্রথমেই তুমি মনোযোগ দিয়ে পড়বে। এতেই তোমার সবকিছু মনে পড়ে যাবে আর পরীক্ষা দেওয়া তোমার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
অনুশীলনের করে আরেক বার প্রস্তুতি ঝালাই করে নাও। একসঙ্গে কয়েকটি অধ্যায় অনুশীলন না করে যে অধ্যায়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা অনুশীলন কর। প্রথমবারেই সব সমস্যার সমাধান নির্ভুলভাবে পারবে—সে জন্য তোমার ধৈর্য থাকতে হবে। কোনো রকম দুশ্চিন্তা করবে না।
গণিত বিষয়টি তোমরা সারা বছর শ্রেণি কার্যক্রমসহ বাসায় অনুশীলন করেছ। বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর শিখতে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, বোর্ড পরীক্ষায় বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল অংশে আলাদা আলাদা নম্বর পেয়ে পাস করতে হবে। তা ছাড়া বিষয়ভিত্তিক গ্রেড পয়েন্ট বাড়ানোর জন্য বহুনির্বাচনি অংশে পূর্ণ নম্বর পাওয়া অনেক জরুরি। কম সময়ে সঠিকভাবে উত্তরগুলো পারার জন্য অধ্যায়ভিত্তিক মৌলিক ধারণাগুলো অনুশীলন করবে।
বহুনির্বাচনি অংশের ৩০ নম্বরের বিভাজন যেমন হবে
‘ক’ বিভাগ (বীজগণিত) থেকে ৯/১০টি প্রশ্ন থাকবে।
‘খ’ বিভাগ (জ্যামিতি) থেকে ৯/১০টি প্রশ্ন থাকবে।
‘গ’ বিভাগ (ত্রিকোণমিতি ও পরিমিতি) থেকে ৮/৯টি প্রশ্ন থাকবে।
‘ঘ’ বিভাগ (পরিসংখ্যান) থেকে ২/৩টি প্রশ্ন থাকবে।
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের কাঠামো
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের কাঠামো কেমন হবে তা নিয়ে চিন্তা করবে না। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সব ধরনের পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখেই করা হয়। যেমন—
—সহজ মান-৩০%(৯টি),
—মধ্যম মান-৫০% (১৫টি) এবং
—কঠিন মান-২০% (৬টি)।
বহুনির্বাচনির উত্তরে বৃত্ত ভরাট—
১. পরীক্ষায় বহুনির্বাচনি অংশে নম্বর থাকবে ৩০। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। সব প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। সময় থাকবে ৩০ মিনিট।
২. বহুনির্বাচনি অংশে OMR সিটে প্রতিটি প্রশ্নের বিপরীতে একটি করে মোট ৩০টি বৃত্ত কালো কালির বলপয়েন্ট কলম দিয়ে ভরাট করতে হবে।
৩. মনে রেখো, একটি প্রশ্নের বিপরীতে একাধিক বৃত্ত ভরাট করা যাবে না। সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
৪. বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর OMR সিটে বৃত্ত ভরাট করার সময় ভুল করা যাবে না। বৃত্ত ভুল ভরাট করলে কিন্তু কেটে ঠিক করার সুযোগ নাই।
৫. মনে রেখো, কোনো বহুনির্বাচনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে ৪০-৫০ সেকেন্ড পাবে। কোনোটি আবার ৬০-৭০ সেকেন্ড পাবে। তাই তোমাকে অবশ্যই সময়ের প্রতি নজর রাখতে হবে।
৬. কোনো কোনো বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করতে রাফ করার প্রয়োজন হবে। তখন মূল খাতার পেছনের কোনো একটি পৃষ্ঠা ব্যবহার করতে পারবে।
সৃজনশীল অংশ
সৃজনশীল অংশে প্রতিটি উদ্দীপক পাঠ্যবইয়ের থাকা সমস্যাগুলোর আলোকেই তৈরি হয়। তবে পাঠ্যবই থেকে হুবহু থাকে না। মৌলিক ধারণা ঠিক রেখে বা গুণগত পরিবর্তন না করে শুধু কাঠামোগত বা অক্ষর বা সংখ্যাভিত্তিক পরিবর্তন করে উদ্দীপক বানানো হয়। অনেক সময় একাধিক অধ্যায় থেকে সমন্বয় করে উদ্দীপক তৈরি করা হয়। পাঠ্যবইয়ের প্রদত্ত তত্ত্ব, তথ্য, সূত্র ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো অনুশীলন করলে প্রশ্নের উদ্দীপক বুঝতে কোনো সমস্যা হবে না। সৃজনশীল অংশের মোট নম্বর ৭০। সময় থাকবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। ৪টি বিভাগ থেকে মোট ৭টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে।
সৃজনশীল অংশে কোন বিভাগ থেকে কয়টা প্রশ্ন
‘ক’ বিভাগ (বীজগণিত): প্রশ্ন থাকবে ৩টি। উত্তর দিতে হবে ২টির। প্রশ্নের নম্বর থাকবে (২ + ৪ + ৪) ´ ২ = ২০।
‘খ’ বিভাগ (জ্যামিতি): প্রশ্ন থাকবে ৩টি। উত্তর দিতে হবে ২টির। প্রশ্নের নম্বর থাকবে (২ + ৪ + ৪) ´ ২ = ২০।
‘গ’ বিভাগ (ত্রিকোণমিতি ও পরিমিতি): প্রশ্ন থাকবে ৩টি। উত্তর দিতে হবে ২টির। প্রশ্নের নম্বর থাকবে (২ + ৪ + ৪) ´ ২ = ২০।
‘ঘ’ বিভাগ (পরিসংখ্যান): প্রশ্ন থাকবে ২টি। উত্তর দিতে হবে ১টির। প্রশ্নের নম্বর থাকবে (২ + ৪ + ৪) ´ ১ = ১০।
পরীক্ষার সময় মনে রাখা জরুরি—
১. গণিত পরীক্ষার প্রথমে ‘বহুনির্বাচনি অংশ’ হবে। পরে হবে ‘সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশ’।
২. সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশের সময় কোনোভাবেই বহুনির্বাচনি অংশের পরীক্ষার কথা মনে করে দুশ্চিন্তা করবে না।
৩. সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় পরীক্ষার খাতার ওপরে ও বাঁ পাশে কালো কালির কলম বা পেনসিল দিয়ে মার্জিন করবে।
৪. প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লেখার পর একটু জায়গা ফাঁকা রাখবে। কোনো রকম ঘিচিঘিচি করে লিখবে না।
৫. প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্ন তিনটি অংশ থাকে। ‘ক’ নম্বর প্রশ্নটি উদ্দীপকের বাইরেও হতে পারে। তবে যে অধ্যায় থেকে উদ্দীপক তৈরি করা
হবে, প্রশ্নটি ওই অধ্যায় থেকেই সাধারণত হয়ে থাকে।
৬. সৃজনশীল প্রশ্নের ‘খ’ ও ‘গ’ নম্বর প্রশ্ন দুটি উদ্দীপকের আলোকে তৈরি করা হয়। সে জন্য ‘খ’ ও ‘গ’ নম্বর প্রশ্নে সমাধান উদ্দীপক ছাড়া করা যাবে না।
৭. সৃজনশীল প্রশ্নের ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ নম্বর প্রশ্ন তিনটি কোনো অবস্থাতেই ‘নির্ভরশীল’ হবে না। ‘নির্ভরশীল’শব্দটির অর্থ হল অর্থ একটি প্রশ্নের উত্তর অন্যটি সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।
৮. জ্যামিতিক চিত্র অবশ্যই শার্প করা পেনসিল দিয়ে পরিষ্কার করে আঁকবে।
৯. পরিসংখ্যানে গ্রাফ করার সময় গ্রাফ পেপারে পেনসিল দিয়ে লেবেল করে গ্রাফ করবে।
১০. অঙ্কের দরকারি স্থানে একক লিখবে। উত্তর আসন্ন হলে মানের শেষে (প্রায়) লিখবে।
১১. গণিত পরীক্ষায় শিক্ষা বোর্ডের নিয়মানুযায়ী তোমরা ‘সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর’ ব্যবহার করতে পারবে।
১২. পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখা শেষ হরে মনোযোগ সহকারে পুরো খাতাটি রিভিশন দিতে ভুলবে না।