প্রিন্ট এর তারিখঃ Aug 4, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Aug 4, 2025 ইং
সরাইলে মোস্তফা কামাল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন: আসামিদের স্বীকারোক্তি

মোহাম্মদ আলী মাস্টার | দৈনিক
জনতার খবর প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। টাকা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পারভেজ (৩৫)।গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাত ১১ টায় উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের বর্ডার বাজার এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে (পাশ্ববর্তী নন্দী পাড়া) নিজ বাড়িতে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল। হত্যার পর তার সঙ্গে থাকা বিকাশ ব্যবসার নগদ অর্থ ও মুঠোফোন নিয়ে যায় হত্যাকারীরা।এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) অজ্ঞাতনামা আসামি করে সরাইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত মোস্তফা কামালের স্ত্রী মোছাঃ ইয়াছমিন আক্তার।ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল হত্যাকাণ্ডে'র পর থেকে আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযানে নামে সরাইল থানা পুলিশ। ঘটনার রাতেই বর্ডার বাজার এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী পারভেজ (৩৫) ও পরের দু-দিনে হিরণ মিয়ার ছেলে কাউছার (৩২) ও একই এলাকার সুমন (২৬) কে গ্রেফতার করা হয়।এর মাঝে অন্যতম আসামি পারভেজ মিয়া শুক্রবার (২ আগস্ট) আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, ব্যবসায়ী মোস্তফা'র কাছে থাকা টাকার ব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতেই চারজন মিলে হামলা চালায় তারা তবে ছিনিয়ে নেওয়ার এক পর্যায়ে বাধার সম্মুখীন হলে তারা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। তবে ছিনিয়ে নেওয়া ব্যাগে আসামি পারভেজের দেওয়া ভাষ্যমতে ১ লাখ টাকা থাকলেও নিহতের পরিবারের দাবি ব্যাগে ছিলো ৪ লাখ টাকা।এদিকে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, কালিকচ্ছ বর্ডার বাজার এলাকার একটি অপরাধ চক্র বহুদিন ধরেই মোস্তাফা'কে লক্ষ্য করে আসছিল। অপরাধী সেই চক্র এলাকায় মাদক ব্যবসা, জুয়া, ছিনতাই, চুরির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে অনেকেই কথা বলে না। এর আগেও ব্যবসায়ী মোস্তফাকে একাধিকবার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে প্রতিবারই তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পান। ভয়ে তিনি ঘটনাগুলো কাউকে জানাননি।এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোঃ নুরনবী জানান, “আমরা পুরো হত্যাকাণ্ডের মোটিভ ও অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করতে পেরেছি। চারজনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকি একজনকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলমান।এদিকে কালিকচ্ছ এলাকার সচেতন মহলের দাবি, বর্ডার বাজার বরাবরই ‘রেড জোন’ হিসেবে পরিচিত। নানা জেলা থেকে এসে গড়ে ওঠা এই আবাসিক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে মাদক ব্যবসা, জুয়া, ছিনতাই ও দস্যুতা। প্রশাসনের একশ্রেণির মদদে এই চক্র অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।এলাকাবাসী বলছে, মোস্তফা হত্যার বিচার যেন কেবল কয়েকজন গ্রেপ্তারে শেষ না হয়। চক্রের পেছনের গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে কালীকচ্ছকে ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ হিসেবে পুনর্গঠন করার দাবি জানান তারা।
স্বত্ব © দৈনিক জনতার খবর ২০২৫ | ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।