এম জিশান পারভেজ।।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারে ছবি অঙ্কনের জন্য পরিচিত তুর্কি বংশোদ্ভূত আমেরিকান শিল্পী রেফিক আনাদোল। যুক্তরাষ্ট্রে নিজের নামেই একটি স্টুডিও বানিয়েছেন এআই ব্যবহার করে আঁকা ছবির জাদুঘর ‘ডেটাল্যান্ড’ এর এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বখ্যাত এই শিল্পী এআই প্রযুক্তির সহায়তায় লিওনেল মেসির পছন্দের গোল অবলম্বনে একটি ডিজিটাল শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন, যার নাম ‘অ্যা গোল ইন লাইফ: মেসি x রেফিক আনাদোল’।
ব্রিটেনের নিলাম প্রতিষ্ঠান ‘ক্রিস্টিস’-এর নিলামে গতকাল এই চিত্রকর্ম ১৮ লাখ ৭০ হাজারে ডলারে (প্রায় ২২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা) বিক্রি হয়েছে। নিলাম প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য ক্রেতার নাম প্রকাশ করেনি। ছবি বিক্রির টাকা ইন্টার মায়ামি ফাউন্ডেশনে দান করা হবে। ফাউন্ডেশনটি বিভিন্ন দাতব্য কাজে অর্থ ব্যয় করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, এল সালভাদর, হন্ডুরাস ও হাইতিতে শিক্ষার প্রসারে ইউনিসেফের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে বিভিন্ন কর্মসূচি।
নিলামের আগে ‘দ্য অ্যাথলেটিক’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আনাদোল জানান, তাঁর ইচ্ছা হলো এই শিল্পকর্ম যেন কোনো ব্যক্তির হাতে গিয়ে হারিয়ে না যায়। মানে, কোনো ব্যক্তির সংগ্রহশালাতে-ই যেন শুধু পড়ে না থাকে শিল্পকর্মটি। আনাদোলের যুক্তি, ‘এটা শুধু দুজন ব্যক্তির মাঝে সংযোগ নয়, এটা দুটি বিভাগের মাঝে সংলাপও। শিল্পীর সঙ্গে শিল্পীর সাক্ষাৎ নয়, খেলার সঙ্গে শিল্পের সাক্ষাৎ। এ কারণেই এটা এত সতেজ ও শক্তিশালী।’
বিভিন্ন যন্ত্র ও এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আনাদোল কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে মেসির পছন্দের গোলটির ত্রিমাত্রিক রূপ দেন। গোলটি ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের। মেসি রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে গোলটি করেছিলেন হেডে। তখন তিনি পেপ গার্দিওলার বার্সেলোনার ‘ড্রিম টিম’ এর ফরোয়ার্ড। ম্যাচের ৭০ মিনিটে জাভি হার্নান্দেজের ক্রস থেকে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার
মেসি লাফিয়ে ইউনাইটেড ডিফেন্ডার রিও ফার্ডিনান্ডের (৬ ফুট ২ ইঞ্চি) চেয়েও বেশি উচ্চতায় ওঠেন এবং হেডে গোল করেন। মেসি এতটাই ওপরে উঠেছিলেন যে পা থেকে বুট খসে গিয়েছিল।
এই গোলটি যে মেসির পছন্দের গোল, সেটি তিনি বলেছিলেন কয়েক মাস আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, যা এখনো প্রকাশ হয়নি—জানিয়েছে অ্যাথলেটিক। মেসি সেখানে বলেছিলেন, ‘(পছন্দের গোল হিসেবে যে কোনো) একটা বেছে নেওয়া কঠিন, কারণ অনেক (গোল) আছে। ওই গোলটি আমার পছন্দের। এটা সবচেয়ে সুন্দর ও অনন্য। কারণ হেডে করেছি, লাফিয়ে অনেক উঁচুতে উঠেছিলাম যেটা আমার ক্ষেত্রে বিরল।’
নিলামের পর কিউরেটর জিমেনা কামিনোস বলেছেন, ‘মেসির সবচেয়ে পছন্দের গোল থেকে এমন শিল্পকর্ম তৈরি হবে, সেটা শুধু হাজারো দর্শকদের আনন্দ দেবে না, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও এগিয়ে নেবে।’
ক্রিস্টিসের ১০ম আর্ট+টেক সম্মেলনে গত ১২ জুলাই থেকে তাদের নিউইয়র্ক শাখায় এই শিল্পকর্মটি প্রদর্শিত হয়েছে। নিলাম প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল সেলসের ব্যবস্থাপক সেবাস্তিয়ান সানচেজ জানান, ১৫ লাখ ডলার থেকে এই শিল্পকর্মের দাম হাঁকা শুরু হয়। ২০২২ বিশ্বকাপে মেসি যে ছয়টি জার্সি পরেছিলেন সেগুলো গত বছর খেলাধুলায় সবচেয়ে দামি স্মারক হিসেবে বিক্রি হয় নিলামে। ৭৮ লাখ ডলার দাম উঠেছিল জার্সিগুলোর।