
এম জিশান পারভেজ।।
এই ম্যাচ বোধ হয় এর চেয়ে বেশি রোমাঞ্চকর হতে পারত না। ১৩৩ রানের জবাবে ৪৭ রানে ৭ উইকেট নেই। পাকিস্তানের হারটাই তখন ভবিতব্য। কিন্তু সালমান আগার দল সেখান থেকেও দেখাল ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা। যদিও শেষটা হার দিয়েই।
শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ২৮ রান, শেষ ওভারে পাকিস্তান জয় থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে। হাতে ১ উইকেট। এক ম্যাচ বাকি থাকতে বাংলাদেশের সিরিজ জয় কিংবা পাকিস্তানের সিরিজে ফেরা—দুটোই হতে পারত সেখান থেকে। হলো শেষ পর্যন্ত প্রথমটি। ৪ বল বাকি থাকতে ১২৫ রানে অলআউট হয়ে ৮ রানে হার পাকিস্তানের, বাংলাদেশের সিরিজ জয় নিশ্চিত এক ম্যাচ হাতে রেখেই।
শেষ দিকে খেলাটা ‘জমিয়ে’ দিয়েছিলেন আসলে বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। দুই বাউন্ডারি আর এক ছক্কা খেয়ে ১৯তম ওভারেই দিয়ে দেন ১৫ রান। শেষ বলে অবশ্য বোল্ড করেছেন ৩২ বলে ৫১ রান করে পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরানো ফাহিম আশরাফকে, বাংলাদেশও আবার ম্যাচে ফেরে তখনই। শেষ ওভারে অবশ্য মোস্তাফিজুর রহমানও শুরু করেছিলেন প্রথম বলে আহমেদ দানিয়ালের ব্যাটে চার খেয়ে। তবে পরের বলেই বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসিয়ে মিডউইকেটে শামীম হোসেনের হাতে ক্যাচ দেন দানিয়াল।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১১০ রানে অলআউট হওয়ার পর পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন সব রাগ উগরে দিয়েছিলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটের ওপর। উইকেট নাকি ‘আন্তর্জাতিক মানের’ই ছিল না। হেসনের জন্য আজকের পরিস্থিতি ছিল আরও ভয়াবহ, যদিও উইকেট নিয়ে অভিযোগ জানানোর সুযোগই ছিল না এদিন। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ১৩৩ রানও পাহাড়সম হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের জন্য। ৪৭ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর অষ্টম উইকেটে ফাহিম ও আব্বাস আফ্রিদির ৪১ রানের জুটি কেবল ম্যাচটাকেই দীর্ঘায়িত করেছে, কমিয়েছে হারের ব্যবধান।
মাত্র ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের শুরুটাই হয়েছিল ভয়াবহ। বাংলাদেশকে অল্প রানে আটকে কোথায় তারা সহজ জয়ের দিকে এগোবে তা নয়, ৪.৪ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চলে যায় খাদের কিনারে। টি-টোয়েন্টিতে এত কম রানে এর আগে প্রথম ৫ উইকেট হারায়নি পাকিস্তান। উল্টো দিকে আরেক রেকর্ড করে ফেলেন বাংলাদেশের বোলাররাও। ১৫/৫—এটাই এখন টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম রানে প্রতিপক্ষের ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব তাঁদের। আগের রেকর্ডটি ছিল ২৪ রানে ৫ উইকেট, পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
পাকিস্তানের ওপরের দিকের ছয় ব্যাটসম্যানের কেউই করতে পারেননি দুই অঙ্কের রান। ৮, ১, ০, ৯, ০, ০। ‘গোল্ডেন ডাক’ হারিস ও মোহাম্মদ নেওয়াজ। বাংলাদেশের বোলিং সব মিলিয়েই হয়েছে দুর্দান্ত। তবু আলাদা করে বলতে হয় শরীফুলের কথা। ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে আজ নিজের সেরা বোলিংটাই করলেন এই বাঁহাতি পেসার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ম্যাচে ১১ রানে ৪ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান নতুন বলে শরীফুলের সঙ্গী হয়ে নিয়েছেন ২৫ রানে ২ উইকেট। পরপর ২ বলে হাসান নেওয়াজ আর মোহাম্মদ নেওয়াজকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগানো তানজিম হাসানের ২ উইকেট ২৩ রানে।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটাও ছিল বেশ নাজুক। শ্রীলঙ্কায় শেষ ম্যাচে ৪৭ বলে অপরাজিত ৭৩ রান করা ওপেনার তানজিদ হাসানকে বিশ্রাম দেওয়াটা চমকই ছিল এদিন। তাঁর জায়গায় পারভেজ হোসেনের ওপেনিং সঙ্গী হয়ে প্রথম ওভারেই ফাহিমের বলে কট বিহাইন্ড মোহাম্মদ নাঈম। টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে এরপর। চাপে থাকলে যা হয়, ১৫ ওভার শেষেও ওভারপ্রতি রান ৬–এর নিচে (৫.৭৩), ৮৬ রানে নেই ৫ উইকেট।
পাওয়ারপ্লেতেই ২৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর অবশ্য এই রানটাকেও কম মনে হচ্ছিল না। জাকের আলী আর মেহেদী মিলে সেখান থেকেই করেন নতুন শুরু। পঞ্চম উইকেটে তাঁদের ৫৩ রানের জুটিতে ১৪ ওভার শেষে ৮১ রান। তবে ওই ওভারেরই শেষ বলে মোহাম্মদ নেওয়াজকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে লং অফে হাসান নেওয়াজের ক্যাচ দুই ছক্কা আর দুই চারে ২৫ বলে ৩৩ রান করা মেহেদী।
জাকের ছিলেন শেষ পর্যন্ত। ব্যক্তিগত ৩৫ রানে একবার জীবন পেয়ে করা তাঁর ৪৮ বলে ৫৫ রানের ইনিংসটা না হলে লজ্জায় পড়তে হতে পারত বাংলাদেশকেও। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার সেটারই স্বীকৃতি। তবে এত কম রান নিয়েও জয়ের কৃতিত্বটা শেষ পর্যন্ত বোলারদেরই দিতে হবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৩ (জাকের ৫৫, মেহেদী ৩৩, পারভেজ ১৩; মির্জা ২/১৭, দানিয়াল ২/২৩, আব্বাস ২/৩৭)। পাকিস্তান: ১৯.২ ওভারে ১২৫ (ফাহিম ৫১, আব্বাস ১৯, দানিয়াল ১৭, খুশদিল ১৩; শরীফুল ৩/১৭, তানজিম ২/২৩, মেহেদী ২/২৫, মোস্তাফিজ ১/১৫, রিশাদ ১/৪২)। ফল: বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী। সিরিজ: ৩–ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২–০–তে এগিয়ে। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জাকের আলী।