যশোরে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সম্মান ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে আয়োজিত হয় এক হৃদয়গ্রাহী ও স্মরণীয় অনুষ্ঠান। বিদায় মানেই চিরবিদায় নয়—এই উপলব্ধিকে সামনে রেখে গড়ে উঠেছিল একটি আবেগ, শ্রদ্ধা ও আনন্দে পরিপূর্ণ দিনের আয়োজন।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় দুপুর ১২টায় ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০৯ নং কক্ষে, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়।
দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক নিতিশ চন্দ্র কর্মকার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “এই ছাত্র-ছাত্রীরা শুধু আমাদের শিক্ষার্থী নয়, তারা আমাদের পরিবার। আমরা গর্বিত এমন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে পেরেছি যারা আগামীতে দেশের ভূগোল, পরিবেশ ও পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল কাদের বলেন, “এই বিদায় কোনো বিচ্ছেদ নয়। এটা এক নতুন শুরু। তোমরা কুঁড়ি থেকে এখন ফুলে পরিবর্তন হয়েছ। এখন সময় সুবাস ছড়িয়ে দেওয়ার। তোমরা মাটি, মানুষ ও দেশের জন্য কাজ করে, আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম উজ্জ্বল করবে। আমি এই আশাবাদ ব্যক্ত করি।”
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ আখতার হোসেন। এছাড়া উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের সকল সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ। একে একে তারা বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রেরণাদায়ী বক্তব্য রাখেন।
পাশাপাশি কলেজের সক্রিয় ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ শাখার সভাপতি হাসান ইমাম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ শাখার মূখ্য সংগঠক মুজাহিদুল ইসলাম রিমন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যশোর জেলা শাখার মুখপাত্র ফাহিম আল ফাত্তাহ প্রমুখ।
বিদায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অনুভূতি প্রকাশ করেন সাবিহা জামান। তাঁর কণ্ঠে জড়িয়ে ছিল কৃতজ্ঞতা ও চোখে ছিল জল — “এই বিভাগ, এই কলেজ শুধু শিক্ষা নয়, আমাদের দ্বিতীয় পরিবার হয়ে উঠেছিল। শিক্ষকদের ভালোবাসা, বন্ধুরা, ক্লাসরুম, মাঠ... সবকিছুই এখন স্মৃতি হয়ে যাবে। কিন্তু এই স্মৃতিগুলোই আমাদের সারাজীবনের শক্তি।”
বিদায়ী শিক্ষার্থীদের হাতে বিভাগের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষকদের সঙ্গে তুলা হয় বিদায়ী ছবি।
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সম্মিলিত শুভকামনা জানানো হয়। বিভাগীয় প্রধান, সিনিয়র শিক্ষক ও অতিথিরা সম্মিলিতভাবে বলেন— “তোমরা যেখানেই যাও, মাইকেল মধুসূদন কলেজের একটি অংশ হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলো। জীবন হবে চ্যালেঞ্জে ভরা, কিন্তু তোমাদের ভিতরে যে শিক্ষা ও নীতি আমরা রোপণ করেছি, তা যেন তোমাদের পথ দেখায়।”
এই বিদায় শুধু এক ব্যাচের বিদায় নয়, বরং নতুন করে পথচলার সূচনা। চার বছরের স্মৃতি, স্নেহ, শিক্ষা আর বন্ধনের আবেগ মিশে গিয়েছিল এই আয়োজনে। ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সেই মিলনায়তন যেন সাক্ষী হয়ে থাকল জীবনের এক মর্মস্পর্শী অধ্যায়ের।