ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার বিরাসার এলাকায় চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে বুধবার (৪ জুন) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঘটে এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে একে একে বিস্ফোরিত হয় অন্তত ৮১৬টি গ্যাস সিলিন্ডার। আগুন ও বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে আশপাশের ঘুমন্ত মানুষজন আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। অনেক দূর থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
দুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন ট্রাকটি শহর বাইপাসের বিরাসার এলাকায় মহাসড়কের একটি বড় গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। ঠিক সেই সময় সামনে থাকা একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে মুহূর্তেই ট্রাকটিতে আগুন ধরে যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ট্রাকে থাকা সিলিন্ডারগুলোর মধ্যে এবং একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সরাইল ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট টানা এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাস জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল প্রাইভেট কারটির ইঞ্জিন থেকে। সেখান থেকে আগুন ট্রাকের গ্যাস সিলিন্ডারগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সব সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, মহাসড়কের দীর্ঘদিনের ভাঙাচোরা অবস্থা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। বৃষ্টির কারণে গর্তে পানি জমে থাকায় ট্রাকটির চাকা গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়।
অটোরিকশাচালক মাহাবুব রহমান সাকিব বলেন, “এই রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত করুণ। কোনো রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই। এত বড় গর্তে না পড়লে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোজাফ্ফর হোসেন জানান, “পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করে। সকাল ৯টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলে। সৌভাগ্যবশত, এত বড় বিস্ফোরণেও কেউ হতাহত হননি। তবে সড়কে দীর্ঘ সময় যানজট ছিল।”
পরে বিকল্প রুটে শহরের ভেতর দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দেশের মহাসড়কগুলোর অব্যবস্থাপনা, বেহাল অবস্থা ও দায়িত্বহীনতার চিত্র নিয়ে। সময় এসেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর দ্রুত সংস্কার, কার্যকর নজরদারি এবং দায়বদ্ধ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার।