ভোলাবাসীর ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ চাওয়ার দাবির প্রেক্ষিতে সরকার সিলিন্ডারজাত গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নিলেও তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে পাইপ লাইনেই ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দাবিতে অনড় ভোলার জনগণ। বুধবার (১৪ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সিলিন্ডার বিতরণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের পক্ষ থেকে ৫৬৮টি সিলিন্ডার বিতরণের ব্যবস্থা করা হলেও, উপস্থিত জনগণের কেউ তা গ্রহণ করেননি।
দীর্ঘদিন ধরে ভোলাবাসী আন্দোলন করে আসছে তাদের নিজ জেলার গ্যাস ঘরে ঘরে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহের দাবিতে। অথচ এখনো পর্যন্ত সরকার সে বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এর পরিবর্তে সরকার নামমাত্র মূল্যে সিলিন্ডারজাত গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেয়, যা স্থানীয়দের কাছে প্রতারণার শামিল মনে হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই ভোলার সচেতন মহল এ বিষয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে। ইন্ট্রাকো কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের দাবিতে স্থানীয়রা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত ভোলাবাসীরাও এতে সংহতি প্রকাশ করেন।
সাম্প্রতিককালে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ভোলা সফরে এসে জনগণের মতামত শোনেন এবং সিদ্ধান্ত হয় প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৬৮টি পরিবারকে সিলিন্ডারজাত গ্যাস সরবরাহ করা হবে। গ্রাহকদের ৮২৫ টাকা জমা দিয়ে একটি করে সিলিন্ডার নিতে বলা হয়। তবে এতে ভোলাবাসী সন্তুষ্ট না হয়ে সিলিন্ডার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
জেলা প্রশাসক আজাদ জাহানের সভাপতিত্বে সিলিন্ডার বিতরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ আমিন উল্লাহ আহসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী গৌতম চন্দ্র কুন্ড, পুলিশ সুপার শরীফুল হকসহ রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ভোলার মানুষের বক্তব্য, “আমাদের দাবি স্পষ্ট—ভোলার গ্যাস আগে ভোলার প্রতিটি ঘরে সংযোগ দিতে হবে, তারপর অন্যত্র সরবরাহ হোক। ৫৬৮টি সিলিন্ডার দিয়ে ২২ লক্ষাধিক মানুষের প্রয়োজন মেটানো অসম্ভব।”
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নাগরিক বলেন, “সরকার ভোলাবাসীর সাথে প্রতারণা করছে। আমরা এই তামাশা মানি না।”
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে বোরহানউদ্দিনে প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পর এখন পর্যন্ত ইলিশা সহ একাধিক গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে ভোলায়। কিন্তু এত গ্যাস থাকা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত সাধারণ মানুষের বাসায় গ্যাস সংযোগের কোনো ব্যবস্থা হয়নি।